নিজস্ব প্রতিবেদক
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সভায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স টিম লিডার গোবিন্দ বরের উপস্থিতির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত প্রতিবাদকারীরা দাবি করেন, সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা চালানো হাসিনা সরকারের দোসর এবং আমলা হিসেবে গোবিন্দ বর কাজ করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যমের একটি সংবাদে ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা গোবিন্দ বরকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সভায় উপস্থিত দেখা গেছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা।
মাহাবুবুল হক শিফন নামের একজন বলেন, গোবিন্দ বর হাসিনা সরকারের একান্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি। অথচ তাকে কমিশনের বৈঠকে দেখা গিয়েছে। এমন দৃশ্য দেখে দেশের জনগণ আহত হয়েছে। যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি ও আন্দোলনে শহীদদের অবমাননার শামিল।
এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমেও গোবিন্দ বরের বিভিন্ন অপকর্মের খবর এর আগে প্রকাশিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মানববন্ধনে হাসিনা সরকারের আমলা গোবিন্দবরসহ চিহ্নিত সব মদদ দাতাদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার বিষয়টি জানান আয়োজকরা।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গোপালগঞ্জ-মাদারীপুর সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে গোবিন্দ বরের অপরাধ শেখ হাসিনার কোনো মন্ত্রীর চেয়ে কম নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষে অনেক বেশি। সরকারি প্রভাব খাটিয়ে বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচন, পুলিশবাহিনীতে ছাত্রলীগের নিয়োগ, দুর্নীতি দমন কমিশনকে আওয়ামীকরণ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ঘুষ বাণিজ্যসহ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খুনি হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
এতে তারা আরও উল্লেখ করেন, প্রভাব খাটিয়ে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনার অভিযোগও রয়েছে গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে গোপালগঞ্জের সিন্ডিকেট সদস্য গোবিন্দ বর আওয়ামী মন্ত্রীদের বিদেশে অর্থপাচারের তথ্য ধামাচাপা দিতেও সক্রিয় ছিলেন। গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের খবর যেন আন্তর্জাতিক মহলে প্রকাশিত না হয় সেজন্যও এই ব্যক্তি সর্বোচ্চ সচেষ্ট ছিল। এমন কি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে।
আয়োজকরা প্রশ্ন তোলেন, তার মতো হোয়াইটকালার ক্রিমিন্যাল কি করে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সরকারের সংস্কার কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে? গণহত্যার বিস্তারিত তদন্ত করলে গণহত্যাকারী সরকারকে টিকিয়ে রাখা ও গণহত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তার জড়িত থাকার অপতৎপরতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। কাজেই রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই সরকারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে গোবিন্দ বরের মতো হোয়াইটকালার ক্রিমিন্যালের সম্পর্ককে আমরা নিন্দা জানাচ্ছি৷
একইসঙ্গে অবিলম্বে গণহত্যাকারী সরকারের সময় তার অপকর্মের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন তারা।