রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহীতে প্রতিবেশীর শতাধিক সুপারি ও মেহগনিগাছ কেটে সাবাড় করেছেন চা দোকানি। থানায় অভিযোগ দেওয়ায় করা হয়েছে হত্যাচেষ্টা। গত ৭ নভেম্বর নগরীর কাটাখালি থানার কাপাসিয়া মৃধাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ১১ নভেম্বর থানায় মামলা দায়ের করেছেন দেলোয়ার হুসাইন।
বাদী দেলোয়ার হুসাইন ওই এলাকার মুনসুর মৃধার ছেলে। তার অভিযোগ, পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে পরে হত্যাচেষ্টা হতো না। মামলা দায়েরের পরও আসামিরা প্রকাশ্যে। পুলিশ তাদের ধরছেই না। আসামিদের হুমকিতে তারা চরম আতঙ্কে।
লিখিত অভিযোগে দেলোয়ার হুসাইন উল্লেখ করেন, কাপাসিয়া এলাকায় তার বড় ভাই আনোয়ার হোসেনের (৫০) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ৭ নভেম্বর রাতে সেখান থেকেই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বাড়ির অদূরে হামলার শিকার হন তিনি।
প্রতিবেশী মুক্তার হোসেন (৫০), তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাসুম চমক (২২), স্ত্রী লাইলী খাতুন চম্পা (৪৫), ছোট ভাই রেজাউল হক (৪০) এবং তার স্ত্রী লাবনী খাতুন (৩০) হাসুয়া, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালান। এলোপাথাড়ি কুপিয়ে তার ভাইয়ের কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন তারা।
বড় ভাইয়ের চিৎকারে বেরিয়ে আসেন মেজো ভাই মনোয়ার হোসেন (৪৫)। তার মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়। টের পেয়ে আরেকভাই সানোয়ার হোসেন (৩৮) ও বড় ভাবি কাজল রেখা (৪০) এগিয়ে যান।
তাদেরও গুরুতর জখম করেন হামলাকারীরা। ভাবির ১২ আনা ওজনের সোনার চেইনও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রথমে থানায় এবং পরে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
হামলার শিকার সানোয়ার হোসেন (৩৮) জানান, হত্যার উদ্দেশ্যেই তাদের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। মারাত্মক জখম নিয়ে তারা প্রথমেই কাটাখালি থানায় যান। সেখান থেকে পরে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা। কিন্তু মেজো ভাই মনোয়ার হোসেন এখনো হাসপাতালে ভর্তি। তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন।
সানোয়ার হোসেন বলেন, নিজেদের চলাচলের জন্য কেনা জমির ওপর রাস্তা রেখেছেন তারা। সেই রাস্তার এক পাশে শতাধিক সুপারি ও মেহগনিগাছ লাগানো। প্রতিবেশী মুক্তার হোসেনও দীর্ঘদিন ধরে সেই রাস্তা ব্যবহার করেন। তারা কখনোই তাকে বাধা দেননি। উল্টো মুক্তার হোসেন ও তার স্বজনরা সেই জমি জবর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এরই জের ধরে ৭ নভেম্বর সকালে দলবল নিয়ে রাস্তার পাশের গাছপালা কেটে ফেলেন মুক্তার হোসেন। বাধা দেওয়ায় ওই সময় তাদের বাড়ির নারী সদস্যদের লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে তিনি নিজেই বাদী হয়ে অভিযোগ নিয়ে যান থানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তার ও তার লোকজন তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
বিষয়টি তিনি ওসিকেও জানান। ওই দিন রাতে একজন পুলিশ সদস্য তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। ওই রাতেই প্রতিদিনের মতো দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তার বড় ভাই আনোয়ার হোসেন। প্রথমে তার ওপর হামলা হয়। ধারালো দা দিয়ে তার মাথায় কোপ দেওয়া হয়েছে। ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে তিনিসহ আরেকভাই ও ভাবি আহত হন।
এই ভুক্তভোগীর অভিযোগ, প্রথমবার অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ নির্বিকার ছিল। তখনই দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরেরবার হামলা চালানোর সাহস পেতেন না অভিযুক্তরা। ঘটনার সপ্তাখানেক পেরিয়ে গেলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। এখনো তাদের দেখে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে তারা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী নগরীর কাটাখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান। তবে তিনি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওসি বলেন, মামলা দায়েরের পর আসামিরা পলাতক। তাদের গ্রেফতারে সব ধরণের চেষ্টা চলছে।