আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে স্পেন থেকে তিন বন্ধু ঘোড়ায় চড়ে সৌদি আরবের পথে যাত্রা শুরু করেছেন। স্পেন থেকে পবিত্র নগরী মক্কা পর্যন্ত ৮ হাজার কিলোমিটারের দীর্ঘ এই রাস্তা তারা ঘোড়ার পিঠে চেপেই পাড়ি দিচ্ছেন।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা ৫০০ বছরের পুরোনো আন্দালুসিয়ান মুসলিম ঐতিহ্যকেও পুনরুজ্জীবিত করছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, স্পেনের তিন বন্ধু পবিত্র হজ পালনের জন্য ঘোড়ায় চড়ে সৌদি আরবের মক্কায় যাচ্ছেন। ইসলাম গ্রহণের পর তাদেরই একজনের একটি প্রতিজ্ঞার কারণে এভাবেই তারা তাদের পবিত্র এই যাত্রা শুরু করেন।
স্প্যানিশ ওই তিন বন্ধুর আবদুল্লাহ হার্নান্দেজ, আবদুল কাদের হারকাসি এবং তারিক রদ্রিগেজ। গত সাড়ে ৩ মাস আগে তারা স্পেন থেকে ঘোড়ার পিঠে চেপে হজের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সম্প্রতি তারা ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছেন। ৫০০ বছরের পুরানো আন্দালুসিয়ান মুসলিম ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি হজযাত্রা সম্পূর্ণ করতে সামনে দিনগুলোতেও তারা তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখবেন।
স্পেন থেকে দীর্ঘ ৮ হাজার কিলোমিটারের (৪৯৭০ মাইল) এই ভ্রমণে ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, কসোভো, উত্তর মেসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রিস এবং তুরস্ক হয়ে সিরিয়ার মধ্য হয়ে সৌদি আরবে পৌঁছানোই স্প্যানিশ ওই বন্ধুর লক্ষ্য।
ইস্তাম্বুল সাবাহাতিন জাইম ইউনিভার্সিটির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি ওই তিন বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এবং অন্যান্য সমর্থকদের সাথে মিলিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক হুসেইন হুসনু কয়ুনোগলু বলেন, ইস্তাম্বুল বহু শতাব্দী ধরে হজযাত্রীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্টপ।
হার্নান্দেজ বলেছেন, তিনি ২৪ বছর বয়সে প্রথম ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেন। ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করার সময় তিনি বাইবেল এবং পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করেছিলেন এবং আয়াতগুলোকে তার কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছিল।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ভূগোল পরীক্ষা দেওয়ার আগে তিনি নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে— পরীক্ষায় পাস করলে তিনি মুসলমান হবেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হার্নান্দেজ ইসলামে ধর্মান্তরিত হন এবং তার পূর্বপুরুষদের মতোই ঘোড়ায় চড়ে মক্কায় হজে যাওয়ার শপথ নেন।
হার্নান্দেজ ব্যাখ্যা করেছেন, তার স্বপ্ন পূরণে হারকাসি এবং রদ্রিগেজও ঘোড়ার চড়ে তার সাথে রওনা হয়েছেন। আর স্পেনে বসবাসকারী নির্মাণকর্মী বোচাইব জাদিল গাড়িতে করে তাদের জন্য লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করছেন।
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যও হচ্ছে পুনরুজ্জীবিত
স্প্যানিশ এই তিন হজযাত্রীর একজন হচ্ছেন— আবদুল কাদের হারকাসি। তিনি বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে পেরে তারা খুশি। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, তারা পবিত্র এই যাত্রার জন্য কয়েক বছর ধরে অর্থ সঞ্চয় করেছেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও হারকাসি জোর দিয়ে বলেন, তাদের যাত্রাটিও দুঃসাহসিকতায় পূর্ণ ছিল। তার ভাষায়, “আমরা মজার মজার মুহূর্ত এবং অ্যাডভেঞ্চারে পূর্ণ সময় কাটিয়েছি। আমরা দেখেছি যে— আল্লাহ আমাদের সাথে ছিলেন। আমরা হজ আদায় করার বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য নিয়ে এই যাত্রা শুরু করেছি।”
তিনি আরও বলেন: “আমরা এখন এই যাত্রার অংশ হয়ে গেছি। আমরা বর্তমানে অর্ধেকটা পার করেছি এবং আশা করি, বাকি যাত্রা আরও সহজ হবে।”
স্প্যানিশ ওই তিন বন্ধুর দলটি বলেছে, তারা ইস্তাম্বুলে রমজান মাস কাটাতে চায় এবং সুলতান আহমেদ মসজিদ এবং হায়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখার ইচ্ছা রয়েছে তাদের।