নিজস্ব প্রতিবেদক,
ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা বকেয়া, আড়তদারের সংখ্যা কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামে এবারও কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া ক্রয় নিয়েও ভর করেছে চিন্তা।
গত দুই বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অবিক্রিত রয়ে যায় বেশিরভাগ কাঁচা চামড়া। ফলে নষ্ট হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার চামড়া। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া কোটি টাকা
ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া আছে আড়তদারদের কোটি কোটি টাকা। মালিক সমিতির হিসেবে প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো। ফলে মূলধনের অভাবে অনেকে মজুদ করতে পারছেন না কাঁচা চামড়া।
কমেছে আড়তদারের সংখ্যা
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির তথ্যানুযায়ী, বছর পাঁচেক আগেও চট্টগ্রামে ১১২ জন সক্রিয় সদস্য ছিলেন- যারা প্রতি বছর চামড়া সংগ্রহ করতেন। কিন্তু এই সদস্য সংখ্যা কমতে কমতে ৩০ জনে এসে ঠেকেছে। ফলে চামড়া সংগ্রহের পরিমাণও কমে গেছে। চামড়ার বাজার মন্দা থাকায় অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
২২ ট্যানারি থেকে এখন একটি
চট্টগ্রামে এক সময় ২২টি ট্যানারি ছিল। বন্ধ হতে হতে বর্তমান একটি ট্যানারি চালু রয়েছে। ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে সংগৃহীত চামড়ার বিরাট একটি অংশ পাঠাতে হয় ঢাকার ট্যানারিগুলোতে। ফলে অবিক্রিত থেকে যাওয়ার শঙ্কায় বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন না আড়তদাররা।
মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারিদের অসচেতনতা
গত কয়েক বছর ধরে ঈদুল আজহা উদযাপন হয়ে আসছে গরমের মধ্যে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে সঠিক সময়ে লবণজাত না করায় চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তা নিতে চান না আড়তদাররা। এছাড়া বেশি মুনাফার আশায় চামড়ার দর ধরে রাখতে রাখতে চামড়া নষ্ট হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন আড়তদাররা।
করোনার কারণে এবছর কোরবানি কম হতে পারে জানিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সহ-সভাপতি মো. আবদুল কাদের বলেন, এ বছর আমাদের কাঁচা চামড়া মজুদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ পিচ। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি বলেন, বকেয়া টাকার তথ্য প্রকাশ হলে ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে। ফলে বকেয়া থাকলেও তা বলা যায় না। তবে প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া আছে।
এবছরও চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা-এমন প্রশ্নে আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সাধ্যের মধ্যে চামড়া ক্রয় করি। ঢাকার অনেক ট্যানারির কাছে আড়তদাররা টাকা পান। যদি মূলধন না থাকে তাহলে আড়তদাররা ব্যবসা করবে কি করে? তাছাড়া একসময় আমাদের সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল প্রায় ১১২ জন। তা কমে ৩০ জনে ঠেকেছে। আর্থিক সংকটে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
‘সাধারণ হিসেবেও যদি প্রতিজন সদস্য ৫ হাজার পিচ করে কাঁচা চামড়া কিনে তাহলে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ পিচ সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু এখন সদস্য রয়েছে ৩০ জন। প্রতি সদস্য ১০ হাজার পিচ চামড়া ক্রয় করলেও ৩ লাখ পিচের বেশি ক্রয় করা যাবে না। সব মিলিয়ে বাস্তবতাটাও বুঝতে হবে-একজন আড়তদারের কতটুকু সামর্থ্য রয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহের পর আড়তে আনতে সময় লাগলেও চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ ব্যবহার করেন না। ফলে আমাদের কাছে আনতে আনতে তা নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে আমরা সেই চামড়া কিনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাবো কেন?
বিএসডি/এমএম