বর্তমান সময় ডেস্ক
আম্বিয়া খাতুন। বয়স ৬০ বছর পেরিয়েছে। এই বয়সে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করার শক্তি নেই ৷ মানুষের সাহায্যে চলে তার জীবন। সরকারি জায়গায় একটি ছাপরা ঘর আছে তার, সেটাও জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলেই চাল চুইয়ে ঘরের মেঝে ভিজে যায়। আর শীতের দিনে ঠান্ডায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। শীত সহ্য করতে না পেরে গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) তিনি একটি কম্বলের জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহবুবুর রহমানের কাছে যান। জেলা প্রশাসক তার কষ্টের কথা শুনে তাকে একটি ঘর উপহার দিয়েছেন।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার কান্দরপাড়ায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে আম্বিয়া খাতুনকে থাকার ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহের প্রতি বুধবার জেলা প্রশাসক তার কার্যালয়ে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের অভাব, অভিযোগ, আবেদন, নিবেদন শোনেন। গত বুধবার গণশুনানিতে শতাধিক মানুষ তাদের কষ্টের কথা জেলা প্রশাসককে শোনান। সে সময় কেউ চাকরি, কেউ চিকিৎসার খরচ, কেউ শীত নিবারণে কম্বল ও আর্থিক সহায়তার আবেদন করেন। অনেকে পরের জমিতে বসবাস করার কষ্টের কথা জানান। সেদিন আম্বিয়া খাতুনও তার কষ্টের কথা বলেন। জেলা প্রশাসক অসহায়দের ঘর ও জমি দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে তিনি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলে সেই সব অসহায় মানুষকে মুজিব শতবর্ষের উপহারের ঘরে থাকার প্রস্তাব দেন।
সেই প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ২৫ জন ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের কাছে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক। তাদের মধ্যে অসহায় ও ভূমিহীন আম্বিয়া খাতুনও আছেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঘর পেয়ে আম্বিয়া খাতুন বলেন, ‘পরের জায়গায়ত কষ্ট করি আছু। বৃষ্টির দিনত কষ্ট আরও বাড়ি যায়। এলা কঠিন শীত করচে। তাই ডিসি স্যারের কাছে একখান কম্বলের তানে গেছিনু। স্যার মোর কথা শুনিয়া এখান ঘর দিবা চাহিল। মুই সেলা (তখন) বিশ্বাস করিবা পারুনি। এইঠে আসিয়া দেখিনু মোরতানে একখান ঘর রেডি করে রাখিছে। মুই আর কী কহিম। গেছিনু কম্বল চাহিবা, পানু একখান পাকা ঘর।’
শ্যামলী বালা (৫৫) নামে এক অসহায় নারীও ঘর পেয়েছে। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি মরার আগে বিল্ডিং ঘরে শুইয়া যাইতে পারমু, জীবনেও ভাবি নাই। যারা আমাকে ঘর দিল, ভগবান যেন তাদের ভালো করে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন , কেউ গৃহহীন থাকবেন না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা সেটা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। গণশুনানিতে আসা অনেকের মুখে যখন শুনলাম তাদের থাকার মতো নিজস্ব ঘর নেই। তখন প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণার কথা মনে পড়ে গেল। এসব অসহায় মানুষগুলোর মুজিব শতবর্ষের ঘর পাওয়ার সুযোগ থাকায় আজ নিজেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তাদের বুঝিয়ে দিলাম।
এসএ