আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০০১ সালে গোল্ডম্যান সাকসের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল প্রথম ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের চমকপ্রদ উত্থানের কথা বলতে গিয়ে দেশগুলোর নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে ব্রিক কথাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।
এই চার দেশ ২০০৯ সালে প্রথমবার সম্মেলন করে; পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ দেওয়ার পর জোটের নাম হয় ব্রিকস। এবার কেবল ইরানই নয়, আর্জেন্টিনাও জোটে যোগ দিতে আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তেহরানের সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ইরান ও জোট উভয়েরই ব্যাপক লাভ হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট ইউক্রেইনে হামলার দায়ে মস্কোকে একঘরে করার চেষ্টা করেছিল, তা যে সফল হয়নি ইরান ও আর্জেন্টিনার এই আবেদনকে তার প্রমাণ হিসেবে দেখাচ্ছে রাশিয়া।
“হোয়াইট হাউস যখন বিশ্বের কোথায় আর কী কী বন্ধ করা যায়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যায় বা নষ্ট করা যায় তা ভাবছে, ইরান ও আর্জেন্টিনা তখন ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আবেদন করেছে,” বলেছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। আর্জেন্টিনা আবেদন করেছে কিনা, সে বিষয়ে জানতে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।
তবে দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেশ কয়েকবারই ব্রিকসে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তার আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী, ব্রিকস জোটের সম্মিলিত অর্থনৈতিক শক্তি ২৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারের মতো, যার ৭০ শতাংশের বেশি কেবল চীনেরই। এরপরের অবস্থান ভারতের, ১৩ শতাংশের মতো। রাশিয়া ও ব্রাজিলের হিস্যা প্রায় ৭ শতাংশ করে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি ব্রিকসের দেশগুলোতে থাকে; বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ২৬ শতাংশও এ ৫ দেশের হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের মদতপুষ্ট শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৭৯ সালে হওয়া ইরানি বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো তেহরানকে একঘরে করে রেখেছে; মধ্যপ্রাচ্যের মোট তেলের রিজার্ভের এক চতুর্থাংশের মালিক হওয়ার পরও একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে শিয়া সংখ্যাগরিণ্ঠ ইরানের অর্থনীতি বেশ সংকটেই আছে।
গত সপ্তাহে ব্রিকস নেতাদের ভার্চুয়াল সম্মেলনে ৫ দেশের শীর্ষ নেতারাই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ‘অপব্যবহারের’ সমালোচনা করেছেন আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বৈশ্বিক সংকট উসকে দেওয়ার দায় পশ্চিমাদের দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রভাবশালী দেশগুলো তাদের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ইউক্রেইনে হামলা চালানোর সিদ্ধান্তকে দুষছেন। ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের পাল্টায় পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপও করেছে।
পুতিন বলছেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদের নিষেধাজ্ঞাকে তিনি মস্কোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক যুদ্ধ হিসেবেও অভিহিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়া এখন চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানো পুতিন বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯১ সালে সোভিয়েত পতনের পর থেকে রাশিয়াকে বারবার অপমান করে গেছে। সামরিক জোট নেটোর বিস্তৃতির মাধ্যমে মস্কোকে হুমকিও দিচ্ছে ওয়াশিংটন। দক্ষিণের প্রতিবেশী দেশটির সামরিক সক্ষমতা কমাতে, সেখানে মস্কোর ভাষায় থাকা ‘নাৎসিদের’ নির্মূলে এবং ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশের রুশভাষীদের সুরক্ষা দিতে রাশিয়া চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে সেনা পাঠায়।
কিইভ বলছে, রাশিয়া আদতে সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় জমি দখলে নেমেছে। মস্কোর আক্রমণের মুখে ভূখণ্ডের কিয়দংশও ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে অঙ্গীকারও করেছে তারা।
বিএসডি/ফয়সাল