নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই কিছুক্ষণের জন্য চোখ আটকাবে যে কারও। দেয়ালে সুন্দর কারুকাজ আর পরিপাটি করে সাজানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কিছু ছবি। সেই সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে তার অমর কয়েকটি বাণী। সবারই নজর কাড়ছে এসবে। এ চিত্র ঢাকার রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের বঙ্গবন্ধু গ্যালারির।
মূলত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের সেবাগ্রহীতারা যেন জাতির জনক সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারেন এবং তার আদর্শ লালনে উদ্বুদ্ধ হন- সেই চিন্তা থেকে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ কিছু ছবি ও অমর বাণী দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারিটি। এই গ্যালারির উদ্যোক্তা ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার রানীখার গ্রামের পুত্রবধূ। তার স্বামী সৈয়দ আলমগীর হোসেন মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক।
বঙ্গবন্ধু গ্যালারি বাস্তবায়ন কাজে সাবিকুন নাহারকে সহযোগিতা করেন গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রমজান খান। তার বাড়িও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের ১ নং ভবনের সামনের অংশে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধু গ্যালারিটি গত ১৫ আগস্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক উদ্বোধন করেন। এরপর কমপ্লেক্সটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা মানুষজন চোখ জুড়ানো বঙ্গবন্ধু গ্যালারি দেখে পুলকিত ও আন্দোলিত হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ শুধুমাত্র গ্যালারি দেখার জন্যও আসছেন কমেপ্লক্সে।
জমির দলিল করতে গুলশান সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আসা গুলশানের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান জানান, কমপ্লেক্সে এত মানুষের জটলার ভিড়ে জাতির জনকের গ্যালারিটি দেখে অনেক ভালো লেগেছে তার। বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে গ্যালারিতে। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শ সম্পর্কে জানাতে এই গ্যালারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বঙ্গবন্ধু গ্যালারি দেখতে আসা ঢাকার মুগদা এলাকার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বাচ্চু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে গ্যালারিতে। প্রতিটি ছবিই যেন জীবন্ত! রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনায় স্বাধীন বাংলাদেশের জনকের এই গ্যালারির মাধ্যমে সেবাগ্রহীতারা বঙ্গবন্ধু ও তার জীবনাদর্শ সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে পারবেন।
ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত মানুষজন আসেন সেবা নিতে। তারা যেন বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারেন, সে জন্য এ গ্যালারি করা হয়েছে। বিশেষ করে এই গ্যালারি নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ও ভাবনাগুলো মনে করিয়ে দেবে’।
এই কাজ সম্পন্ন করতে স্যার (আইনমন্ত্রী আনিসুল হক) আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। আমার অধীনস্থ কর্মকর্তারাও অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাদের অন্যতম গুলশানের সাব রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রমজান খান বললেন রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবিকুন নাহার ১০০ দিনের কর্মসূচি হাতে নেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল যথাসময়ে কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে উপস্থিতি নিশ্চিত করা। অসুস্থদের সেবা নিতে যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
সাবিকুন নাহার বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পরই সহকর্মীদের নিয়ে বসে কোথায় কী সমস্যা আছে সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করি। আমি নিজে সকাল ৯টায় অফিসে হাজির হই- যাতে করে অফিসের সবাই সেটি অনুসরণ করেন। আগে সপ্তাহে এক দিন (বুধবার) গণশুনানির জন্য নির্ধারিত থাকলেও আমি প্রতি দিনই গণশুনানি করছি’।
সেবাগ্রহীতারা যেন রেজিস্ট্রি অফিসে এসে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন- সেজন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুলশানের সাব রেজিস্ট্রার রমজান খান।
তিনি বলেন, রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে সাধারণ মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, সেটি পাল্টে দেওয়ার জন্য কাজ করছি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি মানুষজনকে হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার জন্য। আগে অফিসে সেবাগ্রহীতাদের বসার কোনো জায়গা ছিল না। এখন সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। চাইলেই সেবাগ্রহীতারা আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন।
বিএসডি/আইপি