ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক দলিলপত্র ফাঁসের ঘটনা ‘প্যান্ডোরা পেপারস’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, রাজনীতিবিদ ও ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ ও লেনদেনের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইনের যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে গোপনে ১০ কোটি ডলারের সম্পদ গড়ে তোলার খোঁজও মিলেছে।
ফাঁস হওয়া আর্থিক নথিতে দেখা গেছে, ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন গোপনে মালিকানাধীন অফশোর কোম্পানিগুলোর একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশে কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি কিনেছেন।
বাদশাহ আব্দুল্লাহর আইনজীবীরা বলেছেন, বাড়ি কেনার জন্য বাদশাহ তার ব্যক্তিগত সম্পদের ব্যবহার করেছেন। অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে বাড়ি কেনায় অনৈতিক কিছুই হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা পায় জর্ডান। যুক্তরাজ্য সরকার জর্ডানের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক সহায়তাকারী; ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার আগের পাঁচ বছরের তুলনায় আর্থিক সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৬৫০ মিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করে তারা।
বাদশাহ আব্দুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের মধ্যপন্থী মিত্র হিসেবে দেখা হয়। ২০২০ সালের জুনে জর্ডান কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের বিদেশে পাঠানো অর্থ ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছিল। দেশটির একজন ক্ষুব্ধ নাগরিকের বরাত দিয়ে প্যান্ডোরা পেপারস বলছে, বাদশাহ আবদুল্লাহ ‘রিমোট কন্ট্রোলের’ মতো করে জর্ডান শাসন করছেন। দেশটির সাবেক একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, বাদশাহ আব্দুল্লাহ বছরের ছয় মাস দেশের বাইরে কাটিয়ে দেন।
বাদশাহর গোপন সম্পত্তি কোথায়?
শুধুমাত্র মালিবুতেই জর্ডানের বাদশাহর গোপন সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বিষয়টি তেমন নয়। প্যান্ডোরা পেপারস বলছে, লন্ডন, দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে তার বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মালিবু ছাড়াও এবং লন্ডন ও যুক্তরাজ্যের অ্যাসকোটে তিনটি মহাসাগর ভিউয়েও তার ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সম্পত্তি রয়েছে। সেলিব্রেটিদের বিলাসবহুল বাড়ির জন্য বিখ্যাত মালিবু শহরের সৈকতে চাকচিক্যময় হোটেলের মতো বাদশাহর ২৬ কক্ষের একটি চোখ ধাঁধানো বাড়ি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউনেও তিনি চারটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
প্যান্ডোরা পেপারস
গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপারস , পানামা পেপারস নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে; এই প্যানডোরা পেপারস তার সর্বশেষ ঘটনা।
বিবিসি প্যানোরামা, ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এবং আরও কিছু মিডিয়া অংশীদার মিলে বিশ্বের ১৪টি কোম্পানির এই ১ কোটি ২০ লাখ দলিলপত্র হাতে পেয়েছে। এ দলিলপত্রগুলো উদ্ঘাটন করেছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)।
আইসিআইজের অনুসন্ধানে বিশ্বের প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা এবং তিন শতাধিক সরকারি কর্মকর্তার নাম বেরিয়ে এসেছে; যারা বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং অফশোর কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
বিশ্বের ১১৭টি দেশের ৬০০ জনের বেশি সাংবাদিক ১৮ মাস ধরে এসব আর্থিক দলিল বিশ্লেষণ করে বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গোপনীয় তথ্য ফাঁস করেছেন।