ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইয়েমিনা পার্টির এ নেতা বলেছেন, তাঁর সরকার সব মানুষের জন্য কাজ করবে। তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো।
গতকাল রোববার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নতুন জোট সরকার গঠন নিয়ে বিতর্কের পর ভোট হয়। নতুন জোট সরকারের পক্ষে পড়ে ৬০ ভোট। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পক্ষে পড়ে ৫৯ ভোট।
নেসেটের আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ায় জোট সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নাফতালি বেনেট। আর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর ১২ বছরের ক্ষমতার অবসান হয়।
ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী বেনেটকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও স্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার প্রত্যাশায় আছেন বলে অভিনন্দনবার্তায় জানিয়েছেন।
ইসরায়েলে সরকারে পরিবর্তন এলেও তাতে খুব কমই পার্থক্য দেখছেন ফিলিস্তিনিরা। নাফতালি বেনেট ইসরায়েলের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডো। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের মূল সংগঠনের প্রধান ছিলেন তিনি। ফিলিস্তিনিবিরোধী উগ্র ও বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য বেনেট আলোচিত-সমালোচিত।
পার্লামেন্টে বেনেটের দলের মাত্র ছয়টি আসন থাকলেও গত মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দল ইয়েস আতিদের সরকার গঠনের জন্য তাঁর সমর্থন জরুরি হয়ে পড়েছিল। ইয়েস আতিদের নেতা ইয়ার লাপিডের সঙ্গে বেনেটের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে চার বছর মেয়াদের এ সরকারে প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রী হবেন বেনেট। পরের দুই বছর প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিড।
জোট যাতে সরকার গঠন করতে না পারে, সে জন্য সব চেষ্টাই চালিয়ে আসছিলেন নেতানিয়াহু। জোটকে ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। ক্ষমতা হারানোর পর প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন না। সমর্থকদের মনোবল না হারানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ফিরব।’
অন্যদিকে, বেনেট ক্ষমতার পালাবদল প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি শোকের দিন নয়। গণতন্ত্রে সরকার পরিবর্তন হয়। ইসরায়েলে সেটাই হয়েছে।
ইসরায়েলে কেউ যাতে ভীতসন্ত্রস্ত না হয়, সে জন্য যথাসাধ্য সব চেষ্টাই করবেন বলে জানান বেনেট। উৎসব না করার জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বেনেট বলেন, তাঁরা ইসরায়েলের শত্রু নন। তাঁরা ইসরায়েলেরই মানুষ।
নেতানিয়াহু তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ। গত ২৩ মার্চের নির্বাচনের পর তিনি সরকার গঠনে ব্যর্থ হন।
নেতানিয়াহুর একসময়ের ঘনিষ্ঠজন ও তাঁর সরকারে কয়েক দফায় মন্ত্রিত্ব করা বেনেট মধ্যপন্থী দল ইয়েস আতিদের সঙ্গে জোট গড়তে রাজি হওয়ায় গত সপ্তাহে নেতানিয়াহুর বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজতে শুরু করে। এ জোট ক্ষমতায় এসে তীব্রভাবে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও বিপরীত আদর্শের দলের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নেতানিয়াহুবিরোধী এ জোট।
পার্লামেন্টে জোট সরকার গঠিত হওয়ায় নেতানিয়াহু এখন বিরোধী দলের নেতা হিসেবে থাকবেন। বিরোধী দলে গেলেও দ্রুতই জোট সরকারের পতন ঘটাবেন বলে আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন নেতানিয়াহু। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে। এ মামলা এখন গতি পেতে পারে।