শেষ ১৫ বছরে কোনো ইউরোপিয়ান ফাইনালে স্প্যানিশ দলের বিপক্ষে জয় নেই কোনো ইংলিশ দলের। সে ইতিহাস বদলে দেওয়ার লক্ষ্যটা পূরণ হলো না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। ইউরোপা লিগের ফাইনালে নির্ধারিত সময় ১-১ ড্রয়ের পর সাডেন ডেথে ১১-১০ ব্যবধানে হারল দলটি। আর ইউরোপা লিগ বিশেষজ্ঞ উনাই এমেরির ভিয়ারিয়াল জিতল তাদের ৯৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো ইউরোপীয় শিরোপা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের রানার্স আপের বিপক্ষে লা লিগার সপ্তম দলের লড়াই, ইউরোপার ফাইনালের বিল্ড আপে এ বিষয়টাই যেন বড় হয়ে উঠে আসছিল দারুণভাবে। সাবেক ইউনাইটেড মিডফিল্ডার পল স্কোলস তো বলেই বসেছিলেন, ‘আপনি এখানে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে খেলছেন, যারা বাজে লা লিগা মৌসুমেও লিগ শেষ করেছে ৭-এ থেকে। আপনি রিয়াল-বার্সার কথা ভাবুন, তাহলেই বুঝবেন তারা কত খারাপ খেলেছে। ইউনাইটেডের তো ম্যাচটা হেসে খেলে জেতা উচিত!’
সে তথ্যটা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই হয়তো, ইউনাইটেডই প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল বলের দখলে। তবে প্রতিপক্ষ গোলমুখে তার ছাপ ফেলতে পারছিল না কোচ ওলে গুনার সোলশায়ারের শিষ্যরা। উল্টো ভিয়ারিয়াল নিজেদের প্রথম শটটা নেয় ২৯ মিনিটে, তাতেই গোল। এ মৌসুমেই ভ্যালেন্সিয়া থেকে ভিয়ারিয়ালে আসা দানি পারেহোর দারুণ এক ফ্রি কিকে ভলি থেকে দুর্দান্ত এক ফিনিশ করেন জেরার্ড মোরেনো। চলতি মৌসুমে ৩০তম গোলের দেখা পান তিনি, যা ফাইনালে দলকে পাইয়ে দেয় মহামূল্য লিড।
এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গিয়েছিল ভিয়ারিয়াল, তার আগে ইউনাইটেডের ওপর আধিপত্য ছিল তাদেরই। তবে বিরতির পরে যেন ভাটা পড়ল তাতে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে ইউনাইটেডের আক্রমণের ধার। প্রথমার্ধটা মোটে একটা লক্ষ্যে থাকা শট নিয়ে শেষ করা রেড ডেভিলরা দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের প্রথম ‘অন টার্গেট’ শটেই পায় গোলের দেখা।
৫৫তম মিনিটে কর্নার থেকে সুযোগ পায় ইংলিশ দলটি। সেটা ভিয়ারিয়াল রক্ষণ ক্লিয়ার করলেও ঠিকঠাক বিপদমুক্ত করতে পারেনি আদৌ। বক্সের বাইরে থেকেই যার সুযোগটা নেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। তবে তা এক ভিয়ারিয়াল ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে আসে এডিনসন কাভানির কাছে, ছয় গজ বক্স থেকে গোলটা করতে ভুল করেননি উরুগুইয়ান এই স্ট্রাইকার। সবশেষ ১০ ম্যাচে ৯ গোল করা কাভানির ভুল করার কথাও নয় অবশ্য।
নির্ধারিত সময়ে আরও একটা সুযোগ এসেছিল কাভানির কাছে। কিন্তু ৭২ মিনিটে তার দারুণ এক হেডার ফেরে ভিয়ারিয়াল ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে। এর মিনিট দুয়েক আগে র্যাশফোর্ড প্রতিপক্ষ বিপদসীমায় ফাঁকায় বল পেয়েও পারেননি গোল করতে, ফলে ১-১ সমতা আর ভাঙেনি নির্ধারিত সময়ে।
যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে গোল করার চেয়ে গোল হজম না করাতেই যেন সব মনোযোগ ঢেলে দিয়েছিল ইউনাইটেড। তবে এর মাঝেও দুয়েকটা আক্রমণ দেখা গেছে, যার প্রায় সবকটাই ছিল ভিয়ারিয়ালের। তার একটাতেই ওঠে পেনাল্টির জোর আবেদন। ১১৪ মিনিটে মোরেনোর শট ব্লক করেন ফ্রেড, তবে তাতে হাতের ছোঁয়া ছিল। সে সময়ে তার হাত ছিল শরীরের বাইরে, কিন্তু ভিএআর দেখেও তাতে সাড়া দেননি রেফারি।
এর ফলে ২০১৩-১৪ মৌসুমের পর ফাইনাল গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সব রোমাঞ্চ যেন তোলা ছিল তার জন্যেই। নির্ধারিত পাঁচ পেনাল্টি থেকে কেউই মিস করলেন না, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’-এই যেন ছিল দুই দলের মূলমন্ত্র। খেলা গড়াল সাডেন ডেথে। সেখানেও পরের পাঁচ পেনাল্টি আলাদা করতে পারল না দুই দলকে।
পেনাল্টি শুটআউট নাকি গোলরক্ষকদেরও ভাগ্য পরীক্ষা নেয়। ১১তম শটে ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলি এলেন শট নিতে, গোল পেলেন। এরপর এলেন ইউনাইটেড প্রহরী ডেভিড ডি হেয়া। তিনি আর পারলেন না, তার দূর্বল পেনাল্টিটা ঠেকাতে কোনো সমস্যাই হয়নি আরেক গোলরক্ষক রুলির। পেনাল্টি শুটআউটে ব্যবধান গড়ে দিলেন এক গোলরক্ষক, তবে তা ভিন্নভাবে, গোল করতে না পেরে।
ফলে ৯৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম ইউরোপীয় শিরোপার স্বাদ পায় ভিয়ারিয়াল। উনাই এমেরি পান ক্যারিয়ারে চতুর্থ ইউরোপার দেখা। আর এই ইউরোপাতেই সর্বশেষ শিরোপা জেতা ইউনাইটেডের শিরোপাখরা দীর্ঘায়িত হলো আরও একটা বছর অন্তত, কোচ ওলে গুনার সোলশায়ারেরও বৈকি!