নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘আপনার ছেলে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তাকে ছাড়াতে হলে এখনই বিকাশ বা নগদে এক লাখ টাকা পাঠান। ভ্রাম্যমাণ আদালত এই জরিমানা ধার্য করেছেন। নইলে তাকে চালান দেওয়া হবে।’ এমন ফোন পেয়ে সঙ্গত কারণেই অভিভাবক দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আবার কখনও ফোন করে বলা হয়- ‘আপনার মেয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। দ্রুত টাকা না পাঠালে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হবে।’ এভাবে ডিবি সদস্য পরিচয়ে অভিনব কৌশলে প্রতিদিন দেড়-দুই লাখ টাকা হাতিয়ে আসছিল একটি চক্র। সম্প্রতি তাদের দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আলামিন ওরফে আমীন ওরফে বিনিয়ামিন ও তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম। গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর বনানী থানা এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি পিস্তলের গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, প্রতারণায় ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন ও ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার বিনিয়ামিনের বাড়িতে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশনের দু’টি ভবন ও ১০ বিঘা জমিতে মাছ চাষের প্রকল্প রয়েছে।
ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘চক্রটি প্রথমে পুরনো ভিআইপি মোবাইল ফোন নম্বরগুলো টার্গেট করে। এরপর হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে সার্চ দিয়ে ব্যবহারকারীর সম্পর্কে যথাসম্ভব তথ্য সংগ্রহ করে। শেষে ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার পরিচয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে ফোন করে। বারবার ফোন করে চাপ দিয়ে অভিভাবককে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে যে তিনি ঠিকঠাক চিন্তার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। মুগদা মেডিকেল কলেজের এক অধ্যাপককে এমন বলা হয়েছিল। অনেক পরে তার মনে হয়, আরে আমার ছেলে তো ঘরে ঘুমাচ্ছে! চক্রটি সাধারণত টার্গেট ব্যক্তির সন্তান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকার সময়টি বেছে নেয়। এতে অভিভাবক ফোন করলেও ক্লাসে থাকার কারণে তারা ধরতে পারেন না। ফলে অভিভাবক ধরে নেন, সন্তান সত্যিই বিপদে পড়েছে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় অভিভাবকরা সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে চান। তখন তাদেরই একজন কান্নাজড়িত অস্পষ্ট কণ্ঠে ‘আব্বু’ বা ‘আম্মু’ বলে চিৎকার করে ওঠে। ওইরকম পরিস্থিতিতে বিকৃত কণ্ঠস্বর শুনে অভিভাবক ভেবে নেন এটি বোধহয় তার সন্তানেরই কণ্ঠ। ফলে দ্রুত তিনি টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর আরেক চাল দেয় অপরাধীরা। তারা বলে, সাংবাদিকরা ঘটনাটি জেনে ফেলেছে, ভিডিও করে রেখেছে। এখন তাদের ম্যানেজ করার জন্য আরও টাকা লাগবে। এভাবে তারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করে।
ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার বিনিয়ামিন ময়মনসিংহের ত্রিশালে তার নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের আশেপাশের খেজুর, নারিকেল ও কাঁঠাল গাছে ১৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছে। যাতে সে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সন্দেহভাজন কারও গতিবিধি দেখে পালিয়ে যেতে পারে। এ কারণে অনেকদিন চেষ্টা করেও তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছিল না। তার বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগে অন্তত নয়টি মামলা আছে। এ ধরনের প্রতারক থেকে সাবধান ও অর্থ লেনদেন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা।
বিএসডি/ফয়সাল