বর্তমান সময় ডেস্ক:
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ তরুণ। তাদের ওপর নির্ভর করছে এদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ৯০ শতাংশ তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে। কাজেই তরুণদের বাদ দিয়ে দেশকে কল্পনাও করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ এবং লালন করে তরুণদের এদেশের দায়িত্ব নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ও তারুণ্যের ভাবনা’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে যৌথভাবে বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ টিভি।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডা. মুরাদের কথা আসার পরেই অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাকে জেলা কমিটি থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ কখনো অরুচিকর কথা-বার্তা, অশালীন বক্তব্য সমর্থন করে না। আলাল যে কুরুচিকর বক্তব্য দিয়েছে, বিএনপি তো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টো সাফাই গেয়ে তার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। আগামী সাতদিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে কী-নোট উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম মাসুম বিল্লাহ। উপস্থাপনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, আমি এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা হবে দরদ দিয়ে, উপলব্ধি দিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতে হবে হৃদয় দিয়ে। তিনি বাঙালি জাতিকে শুধু দিয়েই গেছেন, বিনিময়ে পেয়েছেন ১৫ আগস্ট। ১৫ আগস্টের পরে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির আর কিছু দেওয়ার নেই। শুধু রয়েছে তার দীক্ষা, আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করার প্রত্যয়।
ড. মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ তারুণ্যের দেশ। কারণ এদেশে ৪৯ শতাংশ মানুষ ২৪ বছরের নিচে। আমি মনে করি, ভবিষ্যৎ ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ। আমি নিজেও তারুণ্যের চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করি। আমি ভবিষ্যৎ বলতে তাৎক্ষণিক কিছু বলিনি বরং স্থায়ী একটি সমাধানের স্বপ্ন দেখছি।
এছাড়া, গোল টেবিল বৈঠকে তারুণ্যের ভাবনাকে প্রতিফলিত করতে মাসুম বিল্লাহ ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ, দারিদ্র, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, বিচার-আচার, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি, দেশপ্রেমসহ আরও একাধিক বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবমহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, বাঙালির যা কিছু অর্জন, যা কিছু ভালো সবই তরুণদের কারণে হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ, তরুণদের বাংলাদেশ। তরুণরা আমাদের বর্তমান, তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের ওপর এদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, আমাদের তরুণদেরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে একটি সঠিক রাজনৈতিক দর্শন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রায় সকল সিস্টেম তরুণ বিমুখ ছিল। ২০০৮ সালের ইশতেহারে যখন দেশের হবু প্রধান তরুণদেরকে নিয়ে ভাবছেন, সেটা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। সেই ইশতেহারই ছিল আমাদের তরুণদের অগ্রযাত্রার পথে প্রথম সোপান।
প্রজন্ম ’৭১-এর সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুদ্দীন আব্বাস বলেন, তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু চর্চা করলে দেশপ্রেমের জন্য আর কিছুর প্রয়োজন নেই। দেশে তারুণ্যের বিকাশের জায়গা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশে এক শ্রেণীর মানুষ আছে যাদের মা নেই, কারো বাবা নেই তারা এতিমখানায় পড়ছেন। তারা মৌলবাদীদের গড়া মাদ্রাসায় পড়ছেন। তারা অবৈধভাবে গাড়ি, সদরঘাট থেকে মানুষকে বিব্রত করে চাঁদা তুলছে। সেই চাঁদা দিয়ে তারা এতিমখানা চালাচ্ছে। তাদেরকে কি শেখানো হচ্ছে, তারা জাতীয় সংগীত জানে না, মর্ম বোঝে না। তাদের কাছে জাতীয় সংগীতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ তিনি ন্যায়পরায়ণতায় বিশ্বাসী। নেত্রী অবিচল ছিলেন। অন্যদের মতো নিজের বাবার বিচার করতে চেয়েছিলেন।
ডিবিসি নিউজের ডিরেক্টর, স্টাইলিশ গার্মেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও অপো মোবাইল বাংলাদেশের ফ্যাক্টরি ওনার সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য প্রত্যেকটা জায়গায় দেশপ্রেম লাগবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সকলকে যার যার জায়গা থেকে দেশপ্রেমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধু মালিক পক্ষ নয়, শ্রমিকদের মধ্যেও ভালোবাসা লাগবে।
কথাশিল্পী ও প্রাবন্ধিক স্বকৃত নোমান বলেন, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের ধর্মের বাণী, মানবতার বাণী, ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে সাম্প্রদায়িকতার মতো ঘটনা ঘটবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিবার্তা২৪ডটনেট সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, আমাদের এই ছোট্ট দেশে হাজারো সমস্যা আছে, আছে অপার সম্ভাবনাও। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার নাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে আমরা প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখছি আর এগিয়ে যাচ্ছি।
জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, গৌরব ৭১ এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল রূপম, বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল এবং বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার নেতারা ও বিভিন্ন মিডিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিকরা।
বিএসডি/এসএফ