নিজস্ব প্রতিবেদক
র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা বলেছে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ৬০০ লোক মিসিং হয়েছে। কিন্তু আপনার দেশে প্রতি বছর লাখ খানেক লোক মিসিং হয়। পুলিশ লোক মেরে ফেলে। তারা এগুলোকে বলেন ইন দ্য লাইন অব ডিউটি। আর আমাদের দেশে পুলিশ এটা করলে বলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।’
রোববার (২ জানুয়ারি) সিলেটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে। চিঠির মাধ্যমে তাদের এ কথাটা জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আমি চিঠিতে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। তাদের সঙ্গে আমাদের ডায়ালগের সুযোগ রয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনকে চিঠি পাঠিয়েছেন ড. মোমেন। চিঠিতে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক জবাব পাঠানো হয়।
জানা যায়, মোমেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরা হয়। চিঠিতে র্যাবসহ বাংলাদেশের অন্য বাহিনীগুলোর অবদানের কথাও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়।
মোমেন বলেন, ‘আমরা বলেছি, কোনো কিছু না জেনে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা বলেছি, র্যাব যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা এবং এ কারণেই সন্ত্রাস কমেছে, মাদকপাচার, মানবপাচার কমেছে।’
বিশ্ব নিয়ে মার্কিনিদের যে লক্ষ্য তাই তারা পালন করছে। তাই এ নিষেধাজ্ঞা আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে, যোগ করেন মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ডিসেম্বরে যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় তখন তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের নীতিই হলো মানবাধিকার ও গণতন্ত্র। এর উত্তরে আমরা বলেছি, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের জন্যই স্বাধীন হয়েছে।’
এ সময় অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা বলেছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ৬০০ লোক মিসিং হয়েছে। কিন্তু আপনার দেশে প্রতি বছর লাখ খানেক লোক মিসিং হয়। পুলিশ লোক মেরে ফেলে। তারা এগুলোকে বলেন ইন দ্য লাইন অব ডিউটি। আর আমাদের দেশে পুলিশ এটা করলে বলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।’
এদিকে ২৮ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানান, র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ল’ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দফতর।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
এছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
বিএসডি/এসএ