যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে তামাক পণ্যে ট্যাক্স বাড়ানোর পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা জরুরি।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ডরপ ও ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরামের (ডিজেএফবি) যৌথ উদ্যোগে ‘আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ তামাক কর বৃদ্ধির মাধ্যমে যুব সমাজকে তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশের একটি আমাদের এই বাংলাদেশ। এক গবেষণা বলছে, প্রাপ্তবয়স্কদের এক তৃতীয়াংশই তামাক ব্যবহার করছে। আমাদের তরুণদের সংখ্যা বেশি। এই তরুণদের বড় অংশ মাদকে আসক্ত।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারপরেও তরুণদের মধ্যে তামাক নেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তামাক পণ্যের ওপর এত ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে তারপরেও আমরা দেখছি আমাদের প্রতিবেশী দেশের তুলনায় সেই ট্যাক্স অত্যন্ত কম। এই কর, শুল্ক আছে আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তাহলে তরুণদের তামাকের হাত থেকে দূরে রাখতে পারব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু মাত্র ট্যাক্স বৃদ্ধি না, সচেতনতা বাড়াতে হবে। পারিবারিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে সবার আগে। পরবর্তীতে স্কুল কলেজ সহ সমাজের সব ক্ষেত্রেই এই সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
ডিজেএফবির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহার সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন
অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সিটিএফকে বাংলাদেশ-এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, ডরপের গবেষণা পরিচালক যোবায়ের হোসেন, ডিজেএফবির সভাপতি এফ এইচ এম হুমায়ন কবীর প্রমুখ।
প্রজ্ঞার টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রামের হেড হাসান শাহরিয়ার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, দেশে চার কোটি মানুষ তামাক পণ্য ব্যবহার করে। বাজারে ৪ থেকে ১৪ টাকায় সিগারেট পাওয়া যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম কম। সিগারেট অধিক সহজলভ্য হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লে বাড়েনি সিগারেটের দাম। ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত টার্গেট পূরণ করতে হলে প্রতি বছর দেড় শতাংশ হারে তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব সূচকে আমরা এগিয়ে আছি কিন্তু তার বিপরীতে সবচেয়ে কম দাম তামাক পণ্যের দাম বাংলাদেশে। এর কারণে সরকারি অনেক উন্নয়নের সুফল পায়নি। তামাকের মূল্য আংশিক ভাবে বেড়েছে কিন্তু তার পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে।
৩৫ শতাংশ মানুষ তামাকে আসক্ত যার বেশিরভাগই তরুণ। তামাকের পরই কিন্তু তারা ড্রাগ এডিকশনে চলে যায়।
তিনি বলেন, এখানে তামাক পণ্যের দাম কম, ভোক্তা বেশি এ কারণে বিদেশী অনেক তামাক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে।
ডিজেএফবি সদস্য সুশান্ত সিনহা বলেন, আমাদের যুব ও তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের টার্গেট করে। একজন ১৬ বছরের তরুণকে যদি সিগারেট ধরানো যায়। তাহলে বাকী জীবন সে সিগারেট সেবন করবে। এই মৃত্যু বিপণন বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, যুব সমাজকে না বাচাতে পারলে আমাদের যে টার্গেট ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হব সেটা কিন্তু সম্ভব না। তামাকের ট্যাক্স বৃদ্ধি করার পর যে মূল্য দাঁড়াবে সেটাও যে খুব বেশি হবে তা মনে করছি না। কেননা মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ছে। জনগণের সচেতনতা আর সরকারের পদক্ষেপ বাড়লে তরুণদের তামাক পণ্য থেকে দূরে রাখা যাবে।
ডিজেএফবি সভাপতি এফ এইচ এম হুমায়ন কবীর বলেন, যুব সমাজের হাতে তামাক তুলে দিলে দেশ জাতি তাদের কাছ থেকে কিছু পাবে না। তামাক আমাদের রেভিনিউকে সমৃদ্ধ করছে, এই বিষয়ে অনেকে যুক্তি তুলে ধরছেন। ২০১৮-১৯ সালে দেখেছি ২২ হাজার কোটি টাকার কর এসে তামাক থেকে একইভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে চিকিৎসা বাবদ। তাহলে কি দেখলাম অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতি হতে হয়েছে। আমাদের যুব সমাজ নেশা প্রবেশ করছে তার প্রাথমিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে সিগারেট। প্রথমে সিগারেট ধরে তার পরে নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয়।