খেলাধূলা ডেস্ক:
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচই সাক্ষী হলো দুই সেঞ্চুরির। শুক্রবার সিলেট সানরাইজার্স-মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার মধ্যকার ম্যাচে সিলেটের লেন্ডল সিমন্সের পর শতক হাঁকিয়েছেন ঢাকার তামিম ইকবাল খানও। সিলেট সানরাইজার্সের ১৭৫ রানের জবাবে ৬১ বলে শতক তুলে নিয়েছেন তিনি। তামিমের ৬১ বলের শত রানের ইনিংসটিতে আছে ১৫টি চার ও ৩টি ছয়ের মার। বিপিএলে এটি তামিমের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। একইসঙ্গে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও। মুশফিকুর রহিমকে পেছনে ফেলে সেরার আসনে বসেছেন তিনি।
একদিন আগেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে ছয় মাসের বিরতি নিয়েছেন তামিম। জানিয়েছেন,বাকিরা দুর্দান্ত পারফর্ম করুক, যাতে তাকে দরকার না পড়ে। এমন ঘোষণার পরদিনেই তামিম দেখালেন টি-টোয়েন্টির আসল রূপ। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জয়ের ধারায় ফেরালেন নিজের দল মিনিস্টার ঢাকাকে। সঙ্গে আক্ষেপ বাড়ালেন সমর্থক আর বোর্ডের। কারণ এই তামিমের ভাবনাতে নেই আগামী ৬ মাসের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।
ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা তামিম সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে খেলেছেন আরও ৩৩ বল। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬৪ বলে ১১১ রান করে। দুর্দান্ত এই ইনিংসটিতে আছে ১৭টি চার ও ৪টি ছয়ের মার। তাতে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও অসাধারণ জয় তুলে নিল মিনিস্টার ঢাকা। শুক্রবার দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে রান বন্যার ম্যাচে সিলেটকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ঢাকা। পাঁচ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
দুর্দান্ত এই সেঞ্চুরিতে তামিম বসেছে ক্রিস গেইল ও এভিন লুইসের পাশে। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে বিপিএলে একাধিক সেঞ্চুরির মালিক হলেন তিনি। বিপিএলে এতোদিন ধরে একাধিক সেঞ্চুরির কীর্তি ছিল শুধুমাত্র দুই ক্যারিবীয় এভিন লুইস ও ক্রিস গেইলের। দ্য ইউনিভার্স বস বিপিএলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন পাঁচটি আর লুইসের রয়েছে দুইটি। আজ নিজ শহর চট্টগ্রামে একাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ডে দুই ক্যারিবিয়ানের পাশে বসলেন তামিম।
এছাড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে তিন সেঞ্চুরি নিয়ে আগে থেকেই শীর্ষে ছিলেন তামিম। এবার সেটিকে বাড়িয়ে চারে উন্নীত করলেন তামিম। টাইগার এই ওপেনার ছাড়াও এই ফরম্যাটে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে একাধিক সেঞ্চুরি রয়েছে শুধুমাত্র নাজমুল হোসেন শান্তর।
দারুণ এই জয়ে রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন ঢাকার দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ শাহজাদ। উদ্বোধনী জুটিতে ১৭৩ রান যোগ করেন তারা। যা বিপিএলে রান তাড়া করতে নেমে সেরা উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড।
এদিন সিলেটের দেওয়া ১৭৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সিলেটের বোলারদের ওপর চড়াও হন তামিম। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে মোসাদ্দেক হোসেনকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পূর্ণ করেন অর্ধশতক। এরপর আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে তামিম। অবশ্য শতক ছোঁয়ার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরতে পারতেন টাইগারদের ওডিআই অধিনায়ক। ১০ম ওভারে মুক্তার আলীর করা পঞ্চম বল ছিল বেশ বাইরের তামিমের ব্যাটের বাইরের কিনারা লেগে উইকেটরক্ষক এনামুল হক বিজয়ের হাতেও গিয়েছিল কিন্তু তালুবন্দি করে রাখতে পারেননি তিনি। ৭১ রানে জীবন পেয়ে এবার ব্যাট ছোটালেন শতকের দিকে।
এর মধ্যে মোহাম্মদ শাহজাদও পূর্ণ করেন নিজের অর্ধশতক। দুইজনের ব্যাট ভর করে পাহাড়সম রানের লক্ষ্যের দিকে ছুটতে থাকে ঢাকা। ইনিংসের ১৭তম ওভারের তৃতীয় বল আউট সাইড অফে করেন আলাউদ্দিন বাবু। তার বলটি লং অনের ফিল্ডারের বেশ দূর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারিতে আর তাতেই ছুঁয়ে ফেললেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। পূর্ণ করলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি শতক। ওই ওভারের পঞ্চম বলে আলাউদ্দিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শাহজাদ ৫৩ রান করে সানজামুলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন। আর তাতেই ঢাকার ১০ উইকেটে জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। শেষ বলে স্ট্রাইকে এসে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। আর অপরপ্রান্তে শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন ইমরান উজ্জামান। সিলেটের হয়ে একমাত্র উইকেটটি নেন আলাউদ্দিন বাবু।
এর আগে লেন্ডল সিমন্সের শতকে ভর করে ১৭৫ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় সিলেট সানরাইজার্স। ওপেনিংয়ে নেমে চলতি বিপিএলের প্রথম শতকের দেখা পান লেন্ডল সিমন্স। ৬৫ বল মোকাবেলায় ১৪টি বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় সাজানো ছিল সিমন্সের এই ইনিংস। তাণ্ডব চালানো এই ইনিংসে সিমন্সের স্ট্রাইকরেট ১৭৮.৪৬।
মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা:
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, নাঈম শেখ, ইমরানুজ্জামান, শুভাগত হোম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন, এবাদত হোসেন, কায়েস আহমেদ, মোহাম্মদ শাহজাদ এবং আন্দ্রে রাসেল।
সিলেট সানরাইজার্স:
লেন্ডল সিমন্স, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিঠুন, কলিন ইনগ্রাম, এনামুল হক বিজয় (উইকেটরক্ষক), আলাউদ্দিন বাবু, রবি বোপারা, সোহাগ গাজী, সানজামুল ইসলাম, মুক্তার আলী এবং তাসকিন আহমেদ।