এর আগে বুধবার তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক লিরার মান ঠিক রাখতে সমর্থন করার জন্য বাজারে হস্তক্ষেপ করেছিল। কারণ, গত এক মাসে ডলারের বিপরীতে প্রায় ৩০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে লিরা। এরদোয়ানের চাপে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সুদের হার কমিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ২০ শতাংশের কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও সুদের হার কমানো হয়েছে।
দাম কমতে থাকলেও এরই মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার পক্ষে সাফাই গেয়ে চলেছেন। গত মঙ্গলবার আবার ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ দাম হারিয়েছে লিরা। শুধু এ বছরেই ৪৫ শতাংশ দাম কমেছে তুরস্কের মুদ্রার।
এরদোয়ান বিশ্বাস করেন, উচ্চ সুদের হার উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণেই। সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রচলিত অর্থনৈতিক চিন্তাধারার ঠিক বিপরীত। এরদোয়ান সুদের হার কমিয়ে সংকট সমাধানের ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২০১৯ সাল থেকে এরদোয়ান তিনজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে বরখাস্ত করেন। তাঁরা সবাই সুদের হার কম করার বিরোধিতা করেছিলেন।
মূলত এরদোয়ানের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কারণে অর্থনীতির এমন দুর্দশা বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। তাঁর পরিকল্পনা না মানলে নানা জনকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে পদ থেকেও। গত দুই বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চারজন গভর্নর বদলিয়েছেন তিনি। কিন্তু দেশের অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফেরানো যাচ্ছে না। গত মাসে বরখাস্ত করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সেমিহ টুমেনকে। তবে কোনো কিছুতেই মুদ্রস্ফীতি ঠেকানো যাচ্ছে না। আগের তুলনায় এ বছর মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৫০ শতাংশ। দেশটির সাধারণ মানুষ বলছে, ঘুম থেকে উঠেই তারা দেখছে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বুধবার যে তেল ছিল ৪০ লিরা, গতকাল তারা সেই তেল ৮০ লিরায় কিনছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত এরদোয়ানের অর্থনীতি নিয়ে ভ্রান্ত চিন্তার কারণে বর্তমানে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্টের ধারণা, ঋণের ক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ কম রাখলেই অর্থনীতি ফুলে–ফেঁপে ওঠে। তাঁর ধারণা, মুদ্রার দাম কম হওয়া মানে আর্থিক বৃদ্ধি নিশ্চিত হওয়া। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা বলছেন আসলে ঘটনাটি উল্টো। তাঁরা বলছেন, এরদোয়ানের এমন নীতির কারণ তুরস্ককে ডুবিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে জিনিসের দাম বাড়ছে। মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় আমদানি করতে অনেক বেশি অর্থ লাগছে। জ্বালানি তেল থেকে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর দাম বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে।
এমন অবস্থায় বিরোধী দলগুলো আগাম নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। তারা বলছে, এরদোয়ানের কারণে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এটিকে ‘অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রাম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, তিনি কোথায় যেতে চান, এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, এর চূড়ান্ত ফলাফলে জাতি কী পাবে, সে সম্পর্কে তিনি সচেতন।
তথ্যসূত্র: এএফপি ও রয়টার্স
বিএসডি/ এলএল