ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে শত গুণ বেশি তৎপর তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে। করোনাকালে স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি গণমাধ্যমে বেশি করে প্রকাশ পাওয়া শুরু হয়। এ সময় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সচেষ্ট হতে দেখা গেছে। অনেক গণমাধ্যমকর্মীও নিগ্রহের শিকার হয়েছেন।
‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইফতেখারুজ্জামান। আজ মঙ্গলবার সকালে এই ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকার টিকার জন্য একটি মাত্র উৎসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই সিদ্ধান্ত যে ঠিক হয়নি, সেটি এখন প্রমাণিত। টিকা সংগ্রহের জন্য তৃতীয় পক্ষকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে লাভবান করা হয়েছে। আর তার বোঝা বইতে হচ্ছে জনগণকে।
উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার বিষয়ে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসে এসব টিকা আসার কথা ছিল। তবে সেরাম থেকে দুই চালানে মোট ৭০ লাখ টিকা পায় বাংলাদেশ। তার বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া যায় ৩৩ লাখ ডোজ টিকা। করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গত মার্চে টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশ এই টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে। এখন সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে।
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে পর্যায়ক্রমে করোনার টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দেওয়া প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। এই প্রসঙ্গ টেনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ৮০ শতাংশ মানুষকে কীভাবে, কোন উৎস থেকে টিকা দেওয়া হবে, তার কোনো কৌশলগত দিকনির্দেশনা নেই। তার জন্য কোনো পথরেখা সরকার তুলে ধরেনি। কোভিড-১৯-এর শুরুতে ব্যবস্থাপনায় যে ত্রুটি ছিল, তা এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে।
টিআইবির আজকের অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন। তিনি বলেন, টিকা কিনতে গিয়ে সরকারি ক্রয়বিধির ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। এখানে তৃতীয় পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে ২৩১ কোটি টাকা মুনাফা দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়ে ৬৮ লাখ ডোজ টিকা কেনা যেত।
টিআইবির গবেষণাটি গুণগত ও পরিমাণগত দুই পদ্ধতিতে করা হয়েছে। গবেষণায় জরিপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। জরিপে দেশের আট বিভাগের ৪৩ জেলার ১ হাজার ৩৮৭ জন অংশ নেন।