নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ। এরই আগে নতুন ইসি গঠনের উদ্দেশ্য গত বছরের ২০ শে ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। যা শেষ হয়েছে গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই। তবে এবারের সংলাপে নেয়া বেশিরভাগ দলেরই প্রস্তাব ছিল তিন দিনের সার্চ কমিটির পরিবর্তে ইসি গঠনে আইন করা দরকার। আর এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদনও দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংসদের চলতি অধিবেশনেই আইনটি পাস হবে। সরকার নতুন আইনের মাধ্যমে পরবর্তী কমিশন গঠন করতে চাইছে। তবে এখানে বাধ হয়ে দাড়াচ্ছে সময়। কারণ হাতে সময় আছে মাত্র ১৫ কার্যদিবস। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
তবে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সংলাপ ও সেই আলোকে সার্চ কমিটি গঠন এবং নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। এর মধ্যে আইনটি চূড়ান্ত হলে আইনের আলোকেই নিয়োগ হবে সিইসি ও অন্যান্য ইসি। তবে আইনে নির্বাচন কমিশন গঠন ও রাষ্ট্রপতির চলমান প্রক্রিয়ায় তেমন তফাৎ নেই। দুটোই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমনকি গেলো দুই বারের ইসি গঠনের বৈধতাও এই আইনে দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার এই আইনের মাধ্যমেই নতুন কমিশন গঠন করতে চায়। তবে এখানে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে সময়। হিসাব অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে শেষ হবে বর্তমান হুদা কমিশনের মেয়াদ। এরই মধ্যে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে হবে। হাতে সময় আছে মাত্র ১৫ কর্মদিবস। অথচ সরকার কেবল ইসি গঠন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। যার নানা প্রক্রিয়া শেষ হয়ে সংসদে উত্থাপন হতে বেশ সময় লাগার কথা। এমন পরিস্থিতিতে চলমান পুরোনো প্রক্রিয়ায় নতুন সিইসি-ইসি নিয়োগ হবে নাকি নতুন আইনে হবে তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি এর মধ্যে আইনটি চূড়ান্ত হয়ে যায় তাহলে নতুন আইনেই কমিশন গঠন করা হবে।
এত অল্প সময়ে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, অপেক্ষা করুন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন আইন সংসদের চলমান অধিবেশনে পাস করানোর সর্বাত্মক প্রয়াস থাকবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
জানা যায়, সংবিধান অনুযায়ী, ইসি গঠনের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। এতদিন রাষ্ট্রপতি সরাসরি ইসি গঠন করে দিতেন। সার্চ কমিটির মাধ্যমে বিগত দুটি কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানে আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা হয়নি। অবশেষে সেই আইন করে ইসি গঠন হতে যাচ্ছে। এ জন্য গত সোমবার আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যাতে এখনকার মতো অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এবারো সার্চ কমিটির প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতি সংলাপ শুরু করেছেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে নতুন ইসি গঠনের সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু দল সংলাপে অংশ নেয়। এবারের সংলাপে ৩২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এতে এ পর্যন্ত অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগসহ ২৫টি দল। তবে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, বাসদ, জেএসডিসহ (রব) সাতটি রাজনৈতিক দল সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংলাপে অংশ নেয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা সময়ে বিশিষ্টজনেরা ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছেন। এমনকি সংলাপে আওয়ামী লীগও ইসি গঠনে আইনের প্রয়োজন আছে বলে মত দেন।
নতুন আইনেই নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, নতুন আইনেই নির্বাচন কমিশন গঠনে আন্তরিক সরকার। আশা করা যায়, স্বল্প সময়ের মধ্যেই আইন পাস করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া যাবে।
ইসি গঠন নিয়ে আইনের খসড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসি গঠনে আইন করা সাংবিধানিকভাবে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল। তবে কয়েক মাস আগেই সরকারের একাধিক মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এবার আইন করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই। এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের এক মাস আগে তড়িঘড়ি করে আইন করা হচ্ছে। এখনো তিনি আইনের খসড়াটি দেখেননি। গণমাধ্যমে যতটুকু দেখেছেন, তাতে আগের ইসি নিয়োগে বৈধতা দেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে একটি সত্যিকারের কার্যকর ইসি গঠন করতে হবে।
এদিকে, আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় পাসের পর আগামী নির্বাচন কমিশন এই আইনের অধীনে হবে কি না এমন পশ্নের জবাবে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, যদি এর মধ্যে আইন পাস হয়ে যায়, তাহলে হবে। আজ অনুমোদন দেয়া হলো, হয়তো কাল-পরশু দুদিন লাগবে আইন মন্ত্রণালয়ের। তারপর যদি উনারা সংসদে পাঠান, সংসদেও তো কয়েকদিন লাগবে। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে, উনারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। যদি হয়, তো হয়ে যাবে, অসুবিধা তো নেই।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, আইনটি চূড়ান্ত করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। এটি খুব বেশি বড় আইন নয়। এ জাতীয় আইন যেহেতু আমরা হ্যান্ডেল করে আসছি, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন আছে। মোটামুটি সেই অনুযায়ী এটা করা হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচন কমিশন এ আইনের মাধ্যমে গঠন হবে কিনা জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, হ্যাঁ, হবে। আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন ইসি আইন মেনে হবে।
বিএসডি/ এলএল