নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাংক খাতে মেধাবীদের আকর্ষণ করতে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা বেঁধে দিয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকের নিচের পদগুলোতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ কর্মকর্তাদের ন্যূনতম বেতন-ভাতা হবে ২৮ হাজার টাকা। শিক্ষানবিশকাল শেষ হলে প্রারম্ভিক মূল বেতনসহ ন্যূনতম মোট বেতন-ভাতা হবে ৩৯ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই সার্কুলারটি আগামী মার্চ থেকে কার্যকর হবে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোকে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিমালা পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছে।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নীতিমালা কার্যকর থাকবে। সার্কুলারে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের দেওয়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে অদক্ষতার অজুহাতে কোনো কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। এছাড়া নিচের স্তর ও ওপরের স্তরের মধ্যকার বেতন-ভাতা সমন্বয় করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এ নীতিমালা সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব নীতিমালা কার্যকর হবে। সার্কুলারে এই বিষয়টি পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এমডির নেতৃত্বে বিষয়টি পরিপালন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোতে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে একেবারে কম বেতন নির্ধারণ করা হতো। এছাড়া একই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতনের হেরফের হতো।
এতে স্বজনপ্রীতি হতো। এতে ব্যাংকের নতুন কর্মীদের মনোবল নষ্ট হতো। যা ব্যাংকিং খাত বিকাশের অন্তরায় ছিল। এসব সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকের নিচের স্তরে কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা বেঁধে দিল। কোনো ব্যাংক এর কম দিতে পারবে না। তবে বেশি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না।
সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একনিষ্ঠতা, নৈতিকতা, মনোবল ও কর্মস্পৃহা অটুট রাখার লক্ষ্যে তাদের যথাযথ বেতন-ভাতাদি প্রদান করা আবশ্যক। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, কতিপয় ব্যাংকে এন্ট্রি লেভেলের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি যথাযথভাবে নির্ধারণ না করে ইচ্ছামাফিক নির্ধারণ করা হচ্ছে।
যা একই ব্যাংকের অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিদ্যমান বেতন-ভাতাদির তুলনায় খুবই কম। উচ্চ এবং নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির মধ্যে এত অস্বাভাবিক পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকের এন্ট্রি পর্যায়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার, ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার, ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসার অথবা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, শুরুতে এসব কর্মকর্তার শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন-ভাতাদি হবে ২৮ হাজার টাকা। শিক্ষানবিশকাল শেষে কর্মকর্তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতনসহ ন্যূনতম সর্বমোট বেতন-ভাতাদি হবে ৩৯ হাজার টাকা।
নতুন নির্ধারিত বেতন-ভাতাদি কার্যকর করার পর একই পদে আগে থেকে কর্মরত কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের বেতন ভাতাদি কম হবে না। প্র্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তার বেতন-ভাতাদির সঙ্গে ব্যাংকে সর্বনিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির পার্থক্য যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে।
অনুরূপভাবে অন্য সব স্তরের কর্মকর্তাদের জন্যও আনুপাতিক হারে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে। কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি কোনো অবস্থাতেই বর্তমান বেতন-ভাতাদির চেয়ে কম হবে না। তবে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইনক্রিমেন্ট দিয়ে বেতন-ভাতাদি সমন্বয় করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ বা বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনের শর্ত আরোপ করা যাবে না। শুধু নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রাপ্য পদোন্নতি থেকেও বঞ্চিত করা যাবে না।
একই সঙ্গে এই ধরনের অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।
কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতনও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে আলোচ্য সার্কুলারে। এতে বলা হয়, ব্যাংকের মেসেঞ্জার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, অফিস সহায়ক অথবা সমজাতীয় পদ বা সর্বনিম্ন যে কোনো পদের কর্মচারীদের ন্যূনতম প্রারম্ভিক বেতন-ভাতাদি হবে ২৪ হাজার টাকা।
চুক্তিভিত্তিক বা দৈনিক ভিত্তিতে বা আউটসোর্সিং বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি কর্মচারীদের নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়, সেক্ষেত্রে স্থায়ীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে। এখানেও ইচ্ছামাফিক বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা যাবে না।
বিএসডি/ এলএল