মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্বরন: আমি যখন থেকে বুঝতে পারি ও লিখতে পারি, তখন থেকেই লিখা-লিখি করার চরম অভ্যাস আমার,কখনো সখের বশে আবার কখনো প্রতিবাদ ও প্রতিরোদ্ধে। তবে ফ্রন্সে রাসূলে করিম(সা.) কে চরম ব্যঙ্গ করায়,আমি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে এর প্রতিবাদে কী লিখব!? মানুষের টাকা-পয়সা অথবা ধন-সম্পদ ব্যাংকে জমা রাখলে মুনাফা পাওয়া যায়,কিন্তু কেউ কি শুনেছেন যে, কারো জ্ঞান অথবা মেধাশক্তি মাথার মজখে জমা রেখে মুনাফা পেয়েছে? এমন প্রশ্ন করলে হয়তো সবাই বলবে না,পাইনি। হ্যাঁ তাই সারা জীবন খুঁজা খুঁজি করেও পাওয়া যাবে না। কারণ মানুষ তার জ্ঞানশক্তি অথবা মেধা-শক্তির দ্বারায় কোনো বস্তু নির্মাণ অথবা হাতে-কলমে ও ভাষায় প্রকাশ করে যে, শক্তির রুপধারণ করে, তাকেই জ্ঞান ও মেধাশক্তির মুনাফা অর্থাৎ (লাভ) বলে। মানুষের জ্ঞান ও মেধার কাছে দুনিয়ার সকল অর্থ সম্পদ বৃথা। উদাহরণস্বরুপ বলতে গেলে বলা যায় যে,যার প্রচুর অর্থ-সম্পদ আছে,কিন্তু তার কোনো জ্ঞান,মেধাশক্তি ও সু-বুদ্ধি না থাকলে, এই অর্থ-সম্পদ তার হয়তো কোনো কাজে লাগবে না অথবা সে কাজে লাগাতে পারবে না। আর এর উল্টোভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা দিলে,আমি এভাবে দিতে পারি, যে, কোনো ব্যাক্তির অর্থ-সম্পদ অথবা টাকা-পয়সা না থাকলেও তার যদি জ্ঞান,মেধাশক্তি ও সু-বুদ্ধি থাকে তাহলে সে হয়তো সুনাম ও অর্থ-সম্পদের অধিকারী হইতে খুব বেশী সময় লাগবে না।
আমাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো কিন্তু জাতি জ্ঞান,মেধাশক্তি ও বুদ্ধিহীন রয়েগেল, তবে কী দেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলা যায়? না হয়তো বা বলা যায় না, কারণ অনেক বিখ্যাত মনিষীরা বলেছেন,“যে দেশ যত বেশি শিক্ষিত,সে দেশ তত বেশি উন্নত” তার চেয়েও বড় কথা হলো যুদ্ধের সময় ২৫ শে মার্চ রাতে যে, গণহত্যা হয়েছিলো তা বুদ্ধিজীবিদের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্য ও বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষেই এ হত্যাকান্ডের সৃষ্টি। আরো একটি চরম সত্য যদি যোগ করি,তবে বলবো ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডটিও এর সমষ্টি। পীর হাবিবুর রহমান,আমার খুব প্রিয় মানুষ,তার লিখা প্রতিটি শব্দ যেনো আমার কাছে স্পাতের চেয়েও ধারালো। নৈতিকতা ও আত্মমর্যাদার তাগিদে বিশ্বের সকল ধর্ম-বর্ণ সমতল রেখে মানুষ, প্রকৃতি ও জাতির কল্যাণে যেনো তার সকল লিখা। তার লিখা প্রতিটি শব্দে আমি যেনো নতুন করে বেচেঁ থাকার স্বপ্ন দেখি। আমার মত হয়তো তার লক্ষ-কোটি বক্ত রয়েছে, তারা সবাই হয়তো আমার মত। আর না হয়, আমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসে পীর হাবিবুর রহমানকে। এ কথাটি এ জন্যই বলছি, মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারলাম,গত কিছুদিন পূর্বে ফ্রন্সের এক কুলাঙ্গার সন্তান, আমাদের প্রিয়, বিশ্বনবী রাসূলে করিম(সা.) কে চরম ব্যঙ্গ ও অবমাননা করেছে।
বিশ্বনবী রাসূলে করিম(সা.) কে ফ্রন্সের সেই কুলাঙ্গার সন্তান অবমাননা করার প্রতিবাদে পীর হাবিবুর রহমানের কলমের ডগায় এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ তুলে ধরায়, পীর হাবিবুর রহমানের বাড়িতে আক্রমণ,হামলা-এর নিন্দার ভাষা আমার জানা নেই। তবে এটা হয়তো বুঝার বাকী রইলো না যে, “এই সমাজের দালান-কুঠা, কিংবা যন্ত্রমানব,বিশ্রী রকম হিংসুটে সব,স্বার্থ নিয়ে সরব”।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলব,ব্যাক্তির স্বার্থে জাতীকে মেধা-শূণ্য না করে বিষয়গুলোকে প্রতিরোদ করুন। কারও লিখা পছন্দ-অপছন্দ হতেই পারে,কিন্তু পছন্দ না হলেই যে,কলমকে জাপটে ধরতে হবে, তা-তো নয়! সৃষ্টিকর্তার শেষ্ট্র সৃষ্টি মানুষ।কিন্তু কিছু কিছু মানুষ, জন্মের পর হয়তো আল্লাহর দেওয়া বাগশক্তি অথবা ভাষা শক্তি থেকে বঞ্ছিত হয়, তবে তারাও তো কলমের মাধ্যমে নিজের মনের ভাষা প্রকাশ করে। তাই বলছি,কলম সৈনিকদেরকে মূল্যয়ন করুন, এবং তাদের নিরাপত্তা র্নিশ্চিত করুন। মেধাবী বাংলাদেশ গড়ে তুলুন। জাহেলিয়াতের কালো মেঘ সমগ্র আরব উপদ¦ীপের ওপর ছায়া মেলে রেখেছিল। অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ,রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ ও সন্তান হত্যা সহ সব ধরণের অনৈতিক গুণের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। তাদের জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্রাতিরিক্ত ভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সৌভাগ্য রবি উদিত হলো এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) এর শুভ জন্ম উপলক্ষে আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। আর এ পথেই একটি অনগ্রসর জাতীর সৌভাগ্যের ভিত্তিও স্থাপিত হলো। অনতিবিলম্বে এ নূরের বিচ্ছুরণে সমগ্র জগৎ আলোকোদ্ভাসিত হলো এবং সমগ্র বিশ্বে এক সুমহান মানব সভ্যতার ভিত্তিও র্নিমিত হয়ে গেল। আমাদের রাসূলে করিম (সা.)-এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রবর্তনের পর থেকেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলাম ধর্মের ওপর বার বার আঘাত এসেছে। সর্বশেষ নবী করিম (সা.)-কে নিয়ে ফ্রন্সে এক কুলাঙ্গার সন্তান চরম ব্যঙ্গ ও অবমাননা করেছে। বিশ্বের সকল মুসলিমদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে আমাদের বাংলাদেশের মুসলিমরাও পিছিয়ে নেই।
ফ্রন্সে রাসূলে করিম(সা.) কে চরম অবমাননার প্রতিবাদে গত ২ই নভেম্বর ২০২০ ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ইমানী দ্বায়ীত্ব নিয়ে হৃদয়ের প্রেরণায় রাসূলে করিম(সা.) কে চরম অবমাননার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলাম। শুধু তাই নয়। গণজাগরণ মঞ্চের নামে আমাদের মহান স্বাধীনতার চেতনার লেভাস পরে ইমরান এইচ সরকাররা শাহবাগ চত্ত্বরে যখন আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করে ছিলো,তখন ৫ ই মার্চ ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ১৩ দফা দাবিতে, বাংলাদেশের ইসলামের কাদেম, সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি, হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বেবিনামূল্যে কলা,রুটি ও পানি সরবাহ করার কাজে নিয়জিত ছিলাম। যে, কুলাঙ্গার সন্তানরা আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করে,তারা হয়তো জানেনা, আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণের মুহূর্তে সম্রাট খসরুর প্রাসাদের দ্বারমণ্ডপ ফেটে গিয়েছিল এবং এর কয়েকটি স্তম্ভ ধসে পড়েছিল। ফারস প্রদেশের অগ্নি উপাসনালয়ের প্রজ্বলিত অগ্নি নিভে গিয়েছিল। ইরানের সাভেহ হ্রদ শুকিয়ে গিয়েছিল। পবিত্র মক্কার প্রতিমালয় সমূহে রক্ষিত মূর্তি ও প্রতিমাসমূহ মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। তাঁর দেহ থেকে নূর (আলো) বের হয়ে তা আকাশের দিকে উদিত হয়েছিল যার রশি্না ফারসাখ (মাইলের পথ মাইল) পথ আলোকিত করেছিল। সম্রাট আনুশিরওয়ান ও পুরোহিতগণ অতি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দর্শন করেছিলেন। এ সব বিষয় ও তথ্য সকল মৌলিক নির্ভরযোগ্য হাদিস ও ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন করা যায় যে, এ ধরণের অলৌকিক ও অসাধারণ ঘটনাবলীর প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই বা কী ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে সংক্ষেপে অবশ্যই বলতে হয়। এ ধরণের ঘটনাবলী ঐ সব অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী শাসকের অনুভূতিকে জাগ্রত করে যারা বিভিন্ন জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছে। এ সব অত্যাচারী ক্ষমতাধর শাসক এ সব ঘটনা সর্ম্পকে গভীরভাবে চিন্তা করে নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ হবে যে, কি হয়েছিল যে, একজন বৃদ্ধা রমণীর মাটি নির্মিত ঘরে চির ধরেনি, অথচ সম্রাট খসরুর পারভেজের রাজপ্রাসাদের বৃহৎ বৃহৎ স্তম্ভ ধসে পড়েছিল? ইরানের ফারস প্রদেশের অগ্নিমন্দিরের আগুন(অগ্নি প্রজ্বলিত থাকার) সকল উপকরণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কেন নিভে গিয়েছিল, অথচ তখন সব জিনিসই স্ব স্ব স্থানে বহাল ছিল? তারা এ ধরণের ঘটনার কারণ কি হতে পারে সে ব্যাপারে যদি চিন্তা-ভাবনা করত তাহলে বুঝতে পারত এ সব মূর্তিপূজার যুগের অবসান সম্পর্কে এবং খুব শীঘ্রই যে,সকল শয়তানী শক্তি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে সে ব্যাপারেও সু-সংবাদ প্রদান করছে। মূলনীতিগত ভাবে ঐ একই দিনে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাবলী যে,অত্যাচারী শাসকদের উপলদ্ধি ও শিক্ষা গ্রহণের কারণ হতেই হবে এমনটি বোধ হয় জরুরী নয়,বরং যে ঘটনাটি কোন এক বছরে সংঘটিত হয়েছে তা বছরের পর বছর শিক্ষণীয় হতে পারে এবং তার কার্যকারিতা বহাল থাকতে পারে,আর এতটুকুই যথেষ্ট। মহানবী (সা.)যে,রাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ঠিক এ রকমই। কারণ এ সব ঘটনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ঐ সব মানুষের অন্তরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেওয়া ও মনোযোগ সৃষ্টি করা যারা মূর্তিপূজা,অন্যায় ও জুলুমের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল।আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.)এর জন্ম রজনীতে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাবলীর সংকিপ্ত বিবারণ দিলাম। তাঁর জীবনে আরো এমন অসংখ্য অলৌকিক ঘটনাবলীর প্রমাণ পাওয়া যায়।
আমরা জানি, মহানবী (সা.) শান্তির ধর্ম ইসলাম এর জন্য তাঁর জীবনে অনেক বার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর পাওয়া আঘাতে বনের অবুঝ পশু-পাখিঁ সহ সারা জাহানের সৃষ্টিরা কেদেঁছে। আর বর্তমান যুগে সর্বশেষ ফ্রন্সে এক কুলাঙ্গার সন্তানের দ্বারা “নবী করিম(সা.) এর অপমানে বিশ্বমুসলিম কাদেঁ মনেপ্রাণে”। ফ্রন্সে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনে বাংলাদেশের সকল মুসলমানের প্রতিবাদে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রাণকেন্দ্র ঢাকার রাজধানী এখন অচল।
বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের দাবি, ফ্রন্সে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে অবমাননা করায়,ফ্রন্সের প্রেসিডেন্টকে মুসলিম বিশ্বের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। যত দিন ক্ষমা না চাইবে তত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ফ্রন্সের সকল ধরণের পণ্য বর্জন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের জরুরী অধিবেশণ ডেকে ফ্রন্সের প্রতি তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর অনুরোধ করেন। তবে আমি যতদিন দুনিয়ায় বেঁচে থাকবো তত দিন পর্যন্ত ইসলামের ষড়ন্ত্রকারীদের বিরোদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোদ গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।
লেখক ও কলামিষ্ট, অনলাইন নিউজ র্পোটাল, আমাদের সমাজ।