নয়টা হলুদ কার্ড, দুটি লাল কার্ড, প্রশ্নবিদ্ধ পেনাল্টি, আত্মঘাতী গোল, রোনালদোর পেনাল্টি মিস, একের পর এক ভিএআরের সাহায্য নেওয়া, বাজে রেফারিং… কী ছিল না এই ম্যাচে!
জুভেন্টাসের মতো দল লিগের শিরোপা পাওয়া তো দূর, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা পেতেই হিমশিম খাবে, এমনটা কে ভেবেছিল? অথচ সেটাই হচ্ছে। আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিতে রীতিমতো ঘাম ছুটে যাচ্ছে রোনালদোদের।
ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর প্রতিযোগিতায় খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার জন্য আজ জয়ের বিকল্প ছিল না জুভেন্টাসের কাছে। সে লক্ষ্যে সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষকেই আজ আতিথ্য দিয়েছিল তুরিনের বুড়িরা – সদ্যই তাঁদের কাছ থেকে যারা লিগমুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে, সেই ইন্টার মিলান। কিন্তু সকল বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে শেষমেশ ৩-২ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে জুভেন্টাস।
তবে যা খেলা হয়েছে, যারা দেখেছেন, নিঃসন্দেহে বলবেন এ ম্যাচে রোনালদো, লুকাকু, লাওতারো কিংবা কিয়েসা নন – ম্যাচের ‘নায়ক’ রেফারি জাম্পাওলো কালভারেসে। সবাইকে সরিয়ে এ ম্যাচে পাদপ্রদীপের আলোটা যেন নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন এই ইতালিয়ান রেফারি। না হয় এতবার কার্ড বের করা লাগবে কেন, প্রশ্নবিদ্ধ পেনাল্টিই বা দেওয়া হবে কেন দুদলকে!
প্রথমার্ধেই পেনাল্টি পেয়ে যায় জুভেন্টাস। ২২ মিনিটে সেন্টারব্যাক জর্জো কিয়েল্লিনিকে ডি বক্সে ফেলে দেন ইন্টার রাইটব্যাক মাত্তেও দারমিয়ান। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে সেখান থেকে পাওয়া পেনাল্টি মিস করেন রোনালদো, তবে ইন্টার গোলরক্ষক সামির হানদানোভিচের কাছ থেকে চলে আসা বল দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় জালে জড়ান রোনালদো।
৩৫ মিনিটে এবার ইন্টারের সুযোগ আসে পেনাল্টি দিয়েই সমতায় ফেরার। বক্সে ইন্টার স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেজকে ফেলে দেন জুভেন্টাসের উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার রদ্রিগো বেনতাঙ্কুর। আবারও ভিএআরের শরণ নেন কালভারেসে, পেনাল্টি উপহার দেন ইন্টারকে। দলকে সমতায় ফেরান লুকাকু। প্রথমার্ধের একদম শেষ দিকে জুভেন্টাসের রাইট উইংব্যাক হুয়ান কুয়াদ্রাদোর জোরালো শটে আবারও এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। যদিও কুয়াদ্রাদোর সোজাসুজি শটটা হানদানোভিচ আটকাতে পারতেন কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়।
৫৫ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বেনতাঙ্কুর। একজন বেশি নিয়ে খেলার সুবিধা পুরোপুরি নেওয়ার চেষ্টা করে ইন্টার, বেশ কিছু ভালো আক্রমণ রচনা করেন লুকাকু-লাওতারোরা। এ অবস্থায় দলের রক্ষণ আরেকটু জমাট করার লক্ষ্যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেই মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন জুভেন্টাস কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো। লাভ হয়নি। শেষমেশ লুকাকুকে আটকাতে গিয়ে ৮৩ মিনিটে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন কিয়েল্লিনি।
তবে নাটকের শেষ তখনো হয়নি। ৮৮ মিনিটে আরেকটা পেনাল্টি পায় জুভেন্টাস। রোনালদো মাঠে ছিলেন না, তাই এবার পেনাল্টি নিতে আসেন কুয়াদ্রাদো। দলকে এগিয়ে দিতে ভুল করেননি তিনি, জোরালো শটটা আটকানোর জন্য হানদানোভিচ একটু নড়তেও পারেননি। শেষ মূহুর্তে দলকে দশজনের বানিয়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ইন্টারের ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচ।
শেষমেশ ৩-২ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে জুভেন্টাস, আর এর মাধ্যমেই আগামী মৌসুমে তুরিনের বুড়িদের চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার স্বপ্নটা এখনো বেঁচে রইল।