ধর্ম ডেস্ক:
নামাজ আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। নামাজ আল্লাহ তায়ালার অন্যতম ইবাদত। যা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক ও সেতুবন্ধন তৈরি করে। কোরআন-সুন্নায় নামাজের ফজিলত, উপকারিতা ও মর্যাদা তুলে ধরে নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেয়া হবে। নামাজ ইসলাম ও মুসলমানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামাজ মানুষকে সব অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।
নামাজই একমাত্র ইবাদত যা মানুষকে সব অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। এটি কোনো মিথ্যা দাবি নয় আর তা মানুষের কথাও নয়। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ
‘(হে রাসূল!) আপনার প্রতি যে কিতাব ওহি (নাজিল) করা হয়েছে; তা থেকে তেলাওয়াত করুন আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)
নামাজ আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির ও সেরা নেয়ামত। যারাই নিজেদের নামাজি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মহান আল্লাহ সেব বান্দাকে দান করেন অশ্লীলতা, পাপাচার, অন্ধ ভোগ-বিলাস ও ক্ষণস্থায়ী মন্দকাজ থেকে বিরত রেখে পুত-পবিত্র জীবন দান করেন। নামাজ সম্পর্কে হজরত ওমর (রা.) চমৎকার একটি কথা তুলে ধরেছেন-
إِنّ أَهَمّ أَمْرِكُمْ عِنْدِي الصّلَاةُ. فَمَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا، حَفِظَ دِينَهُ. وَمَنْ ضَيّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ.
‘নিশ্চয়ই আমার কাছে সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজের হেফাযত করলো আর যত্নের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো; সে তার দ্বীনকে হেফাজত করলো। আর যে নামাজ আদায়ে অবহেলা করলো; সে (দ্বীনের) অন্যান্য সব বিষয়ে আরও বেশি অবহেলা করলো।’ (মুয়াত্তা মালেক, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
নামাজ শুধু মানুষের দুনিয়ার জীবনকে পবিত্র ও উন্নতই করে না বরং আদর্শ জীবনের অধিকারী করে দেয় নামাজ। চরিত্রকে কুপ্রবৃত্তিমুক্ত করে। আর নামাজির জন্য জান্নাতের দরজা থাকে উন্মুক্ত।
যেহেতু নামাজ ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। যে জিকিরের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে দুনিয়ার সব অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। যেমন- নিয়মিত নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি যখনই কোনো অন্যায় বা অশ্লীল কাজ করে যায়, তখনই চিন্তা করে কিছুক্ষণের মধ্যেই তো আমি নামাজে আল্লাহর মুখোমুখি হবো; তাহলে কী করে অশ্লীল অন্যায় কাজে নিজোজিত হচ্ছি? আর এ নামাজই মানুষকে সব অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর এ কথাই বলেছেন মহান আল্লাহ-
اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ
‘নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ সব তাফসিরে এসেছে, ‘তাকবির, তাসবিহ, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো, কেরাত পড়া এবং রুকু-সেজদাহ করার সামষ্টিক আমলের নাম হচ্ছে নামাজ। আর নিয়মিত নামাজ আদায়কারীকে নামাজই যেন বলতে থাকে- হে নামাজি! অশ্লীল ও অন্যায় কাজ তোমার জন্য নয়। আল্লাহর নাফরমানি ও অবাধ্যতা তোমার জন্য নয়। তুমি তো সেই ব্যক্তি; যে নামাজে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা করে এ ওয়াদা করছো যে-
‘হে আল্লাহ! আমি আপনারই ইবাদত করি; আর আপনার কাছেই সাহায্য চাই। আমাকে সহজ সরল পথ দেখান। তাদের পথ দেখান; যাদের প্রতি আপনি নেয়ামত দান করেছেন। আর অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টতার পথ থেকে আমাকে মুক্তি দাও।’
নামাজে আল্লাহর কাছে এ রকম প্রকৃত আবেদনকারীকে আল্লাহ কখনো অশ্লীল ও মন্দকাজে নিয়োজিত করেন না; বরং মন্দ ও অশ্লীলতা থেকে হেফাজত করেন। এ কথাই মহান আল্লাহ কোরআনে পাকে ঘোষণা করেছেন।
নামাজই মুসল্লিকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু তা কখন, কীভাবে? এ ঘোষণার চূড়ান্ত ফল পাওয়ার জন্য কোনো শর্ত রয়েছে কি? কিংবা মুসল্লির বোরো করণীয়-বর্জনীয় আছে কি?
হ্যাঁ, নামাজি কেমন হতে হবে সে সম্পর্কে কোরআন-সুন্নায় দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন-
فَوَیْلٌ لِّلْمُصَلِّیْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ یُرَآءُوْنَ
‘দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য; যারা তাদের নামাজে উদাসিন থাকে। যারা শুধু (মানুষদের) দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে।’ (সুরা মাউন : আয়াত ৪-৫)
সুতরাং যে নামাজি তার নামাজে একনিষ্ঠ; শুধু সে নামাজিই থাকবে অশ্লীলতা মন্দকাজ থেকে মুক্ত। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে এবং যথাসময়ে নামাজ আদায় করবে- এভাবে যে, রুকু-সেজদা ও খুশূ পূর্ণরূপে সম্পাদন করবে, তার জন্য আল্লাহ পাক ক্ষমার (অন্য বর্ণনায়, জান্নাতের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি (এসব) করবে না তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। ইচ্ছা হলে মাফ করবেন নতুবা শাস্তি দেবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ)
সুতরাং কোরআন সুন্নাহর আলোকে নামাজে যেমন একনিষ্ঠ হতে হবে; তেমনি নামাজে আল্লাহর ভয়ও থাকতে হবে। আর নামাজের প্রতি রোকন আদায় করতে হবে ধীরস্থিরভাবে। তবেই নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখবে।
সর্বশেষ নামাজ শেষ করার আগে নামাজি ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার একাধিক দোয়া করেন। যাকে মানুষ দোয়ায়ে মাছুরা হিসেবে জানে। আর তাতে নামাজি বলছেন-
> اللّهُمّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلاَ يَغْفِرُ الذّنُوبَ إِلَا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرّحِيمُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরা; ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা; ফাগফিরলি মাগফিরাতম মিন ইংদিকা; ওয়ার হামনি; ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি (আপনার অবধ্যতার মাধ্যমে) নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহ মাফকারী কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহমত দান করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাকারী, করুণাময়।’
> اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا أَللَّهُ بِأَنَّكَ الْوَاحِدُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، أَنْ تَغْفِرَ لِي ذُنُوبِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা; ইয়া আল্লাহু; বিআন্নাকাল ওয়াহিদুল আহাদুস সামাদ; আল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ; ওয়া লাম ইয়াকুন লাহু কুফুওয়ান আহাদ; আন তাগফিরলি জুনুবি; ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি তো সেই সত্তা যিনি এক ও একক এবং অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি আর তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তার সমকক্ষ কেউ নেই। আপনি আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’
> اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّم- وَأعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ- وَ أَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ – وَ أَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ فِتْنَةِ الْمَمَاتِ – اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أعُوْذُبِكَ مِنْ الْمَأْثَمِ وَ الْمَغْرَم
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি ঝাহান্নাম। ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্ববর। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাঝ্ঝাল। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল্ মাছামি ওয়া মিনাল মাগরাম।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব হতে আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই দাজ্জালের ফিতনার পরীক্ষা থেকে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে এবং তোমার কাছে আশ্রয় চাই পাপ ও ঋণের বোঝা থেকে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
সুতরাং যে নামাজি নামাজের শেষ করার আগে নফসের প্রতি জুলুমের অপরাধে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সে বান্দা কীভাবে অশ্লীল ও মন্দকাজ করতে পারে? প্রকৃতপক্ষে যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে তারা কখনোই অশ্লীল ও মন্দকাজ করতে পারে না। আর মহান আল্লাহ তায়ালার কথাই সত্য যে, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।
মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন!
বিএসডি/আইপি