খেলাধূলা ডেস্ক:
প্রথমবারের মতো নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এজন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি দেশ ছাড়ে টাইগ্রেসরা। নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে দশদিনের কোয়ারেন্টাইনের পর অনুশীলনে ফিরেছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে আইসিসি প্রত্যেক দেশের অধিনায়ককে কলাম লেখার আমন্ত্রণ জানায়। আজ (বৃহস্পতিবার) নিজেদের বিশ্বকাপ ভাবনার কথা জানান বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার।
নিগারের লেখা কলামটি তুলে ধরা হলো-
আইসিসি নারীদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলা আমাদের জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষীত স্বপ্ন পূরণ। তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেললেও আমরা কখনো ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলিনি। তাই আমরা খুব শিহরিত এবং এই বিশাল মঞ্চে আমরা পারফর্ম করতে অধীর। আমরা এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই।
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা কখনো ওয়ানডেতে খেলিনি, তাই এটা হতে যাচ্ছে নতুন অভিজ্ঞতা। আমরা টিভি ও ইন্টারনেটে তাদের অনুসরণ করি। জানতাম কোনো একদিন তাদের বিপক্ষে আমাদের খেলতে হতে পারে। আমাদের অ্যানালিস্টরা আমাদের প্রস্তুতিতে সহায়তা করতে তাদের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।
২০১৮ সালে এশিয়া কাপে আমাদের জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটের চেহারা পাল্টে গিয়েছে। লোকেরা এখন অনেক আগ্রহ দেখায় কারণ তারা জানে বাংলাদেশের মেয়েদের দলের অস্তিত্ব আছে- তার আগে তো কিছু লোক জানতোই না যে বাংলাদেশের নারী দল বলে কিছু আছে। এখন লোকদের আগ্রহ বাড়ছে এবং তারা জানতে চাই কোথায় ও কীভাবে আমরা খেলতে যাচ্ছি।
গণমাধ্যমের আগ্রহও দেখা যাচ্ছে এবং আমরা যখন বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলাম, পুরো জাতি খুব খুশি হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভ্যর্থনা দেখেই সেটা বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশ একটি ক্রিকেটপ্রেমী দেশ। এখন মেয়েদের দলের প্রতিও ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে। এটি চাপ বাড়ায় কিন্তু এই চাপ ভালো, তাদের জন্য ভালো কিছু করার ঐতিহাসিক মুহূর্ত অনুভব করি আমরা।
এই প্রতিযোগিতা আমাদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ কারণ আমরা দেখাতে পারব আমাদের সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা একটি দল হিসেবে উন্নতি করছি। সেখানে যদি ভালো করি, আরো বেশি দল আমাদের বিপক্ষে খেলতে আগ্রহী হবে, আরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমাদের দেশে ফিরবে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও চেষ্টা করবে ঘরোয়া ম্যাচ বাড়াতে।
সেখান থেকে আরো অনেক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া যাবে কারণ নতুন খেলোয়াড় আবিষ্কারের জন্য পাইপলাইন দরকার। অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-১৭ ও উদীয়মান দলগুলো নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড কাজ করছে। অনেক ক্রিকেটার আছে যারা চায় আমরা ভালো করি কারণ তারা জানে আমরা ভালো করলে তারাও সুন্দর ভবিষ্যৎ পাবে।
আমাদের বর্তমান দলের দুই ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ও শারমিন আক্তার সুপ্তা কোয়ালিফায়ারে ভালো খেলেছিল এবং খুব ভালো অবস্থানে আছে। রুমানা আহমেদ দলের প্রয়োজনে সবসময় এগিয়ে আসে এবং সালমা খাতুন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। বোলিং আক্রমণে আমরা একজন তরুণ ফাস্ট বোলার, সুরাইয়া আজমিনকে যুক্ত করেছি, যাকে এখনো বিশ্ব ক্রিকেট খুব বেশি দেখেনি। এবং ফারিহা তৃষ্ণা বাঁহাতি বোলিংয়ে আছে।
আমরা আমাদের দলে তিন জন সাবেক অধিনায়ক- সালমা, রুমানা ও জাহানারা আলমকে পেয়েছি, যারা আমাকে অনেক সহায়তা করছে এবং আমি তাদের সব উপদেশ বোর্ডের কাছে জানাই।
ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে বলছি, আমাদের প্রথম বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারা আমার জন্য বিশাল সুযোগ। আমরা যদি সেখানে ভালো করতে পারি, তাহলে এটা হতে যাচ্ছে আমাদের সবার জন্য একটি দারুণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করে বাংলাদেশ নারী দল নিউজিল্যান্ডে পৌঁছায় ৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন থেকে শুরু কোয়ারেন্টাইন পর্ব। ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইন পর্ব শেষে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্ত হয় বাঘিনীরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে কন্ডিশনিং ক্যাম্প। ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পের পর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপের অংশ হবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
আগামী মার্চ মাসে শুরু হবে নারীদের এই বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টটির পর্দা উঠবে আগামী ৪ মার্চ। বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে উদ্বোধনীর পরের দিন অর্থাৎ ৫ মার্চ। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। টাইগ্রেসদের পরের ম্যাচ ১৪ মার্চ, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত নারী দলের বিপক্ষে ম্যাচ ১৮ ও ২২ মার্চ। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির দল অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের বিপক্ষে লড়বে ২৫ মার্চ। বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩ এপ্রিল।