কাজটা কঠিন ছিল। চ্যাম্পিয়নস লিগের এই ম্যাচের বহু আগেই জানা গেছে, কিলিয়ান এমবাপ্পে একাদশে থাকবেন না। প্রতিপক্ষের মাঠে কোয়ার্টার ফাইনাল ও শেষ ষোলোতে পাঁচ গোল করা এক ফরোয়ার্ডকে ছাড়া পিএসজি ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে জয় পাবে, এতটা আশা করা কঠিন। তবু নেইমার ছিলেন বলেই স্বপ্ন দেখছিল প্যারিসিয়ানরা।
নেইমারই সে স্বপ্নের সমাধি টানলেন। একক দক্ষতায় দল জেতানোর নেশায় এমনই বাজে খেললেন যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিল তাঁর খেলা। সতীর্থদের সময়মতো পাস দেননি, অযথা বেশি সময় বল ধরে রেখেছেন, আর বলের দখল হারিয়েছেন সবচেয়ে বেশিবার। এমবাপ্পে নামতে পারেননি, নেইমারের বাকি সতীর্থদের খেলা দেখেও মনে হয়নি তাঁরা সেমিফাইনাল খেলার যোগ্য। পুরো ম্যাচে গোলে একটি শট নিতে পারেনি পিএসজি।
ওদিকে দল হিসেবে খেলা সিটি দেখিয়ে দিয়েছে কৌশল, সৃষ্টিশীলতা আর নিয়ন্ত্রণের মিশেলে কীভাবে ম্যাচ বের করে নেওয়া যায়। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে পিএসজিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে সিটি। রিয়াদ মাহরেজের জোড়া গোলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে ফাইনালে চলে গেলেন পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠলেন গার্দিওলা।
৬৯ থেকে ৭৩ মিনিট পর্যন্ত পাগলাটে কিছু দেখা গেল ইতিহাদে। থ্রো-ইন পেয়েছিল পিএসজি। সে বল নিতে গিয়েছিলেন আনহেল দি মারিয়া। তাঁর বল নেওয়ার পথে অযথা বাধা সৃষ্টি করতে গিয়েছিলেন ফার্নান্দিনিও। দি মারিয়ার তা পছন্দ না হওয়ায় প্রথমে ধাক্কা দিলেন, পরে পাও মাড়িয়ে দিলেন। সরাসরি লাল কার্ড! এই লাল কার্ড নিয়ে নিজের ক্ষোভ জানিয়ে আবার হলুদ কার্ড দেখলেন পিএসজির মার্কো ভেরাত্তি। একটু পর ইতালিয়ান মিডফিল্ডারের ফাউলের শিকার হয়ে ফিল ফোডেন যখন মাটিতে গড়াচ্ছেন তখন পিএসজির পারেদেস তাঁর দিকে বল ছুঁড়ে মারলেন।
এটা দেখে ক্ষেপে উঠলেন জিনচেনকো। এই লেফটব্যাকও দেখলেন হলুদ কার্ড। পরের মিনিটেই ভেরাত্তি এমন এক ফাউল করলেন, যেটা আগে হলুদ কার্ড দেখে না বসলে আরেকটি কার্ড জুটত। এক মিনিট পরই আবার হলুদ কার্ড। এবার সিটির হয়ে কার্ড দেখার পালা কেভিন ডি ব্রুইনার!
এমন নাটকীয় সব ঘটনার আগেই ম্যাচের মীমাংসা প্রায় হয়ে গিয়েছিল। প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ২-১ গোলে জিতে আসা সিটি ৬৩ মিনিটের মধ্যে ২ গোল দিয়ে ফেলে। ফলে পিএসজির জন্য ফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ দাঁড়ায়, ২৭ মিনিটে দিতে হবে তিন গোল। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ছাড়া কাজটা যে অসম্ভব সেটা ততক্ষণে জেনে গেছেন সবাই।
ম্যাচের শুরুতেই চমক। ইতিহাদের মাঠ পুরোটা শুভ্র হয়ে দেখা দিল। বরফ আর বৃষ্টি মিলিয়ে মাঠের পরিস্থিতি সুন্দর খেলার আশা দেখাচ্ছিল না। এর মধ্যেই পাগলাটে ফুটবল দেখে ফেললেন সবাই। ৭ মিনিটে আচমকা পেনাল্টি পেয়ে বসে পিএসজি। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি জানান, বল জিনচেনকোর হাতে নয়, কাঁধে লেগেছে। সে চমক কেটে ওঠার আগেই গোল খেয়ে বসল পিএসজি। দারুণ এক ক্রস করেছিলেন সিটি গোলকিপার এদেরসন। সে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জিনচেনকো বাড়িয়ে দিলেন কেভিন ডি ব্রুইনার উদ্দেশ্যে। ব্রুইনার শট মারকিনিয়োস ঠেকিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ফিরতি বল থেকে মাহরেজের শট কেউ ঠেকাতে পারেননি। ১১ মিনিটেই এগিয়ে গেল স্বাগতিক দল।
১৭ মিনিটেই সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল পিএসজি। ডি মারিয়ার ক্রস থেকে হেড করেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে গোল করা মারকিনিয়োস। কিন্তু সেটা ক্রসবারে লেগে হতাশ করে পিএসজিকে।
প্রথমার্ধে সিটি আরও বেশ কয়েকবার এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু কখনো কেইলর নাভাস, কখনো ভাগ্য তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও নাভাস দুবার বাঁচিয়ে দিয়েছেন দলকে। কিন্তু ৬৩ মিনিটে প্রতিআক্রমণে ওঠা সিটির দুর্দান্ত আক্রমণভাগকে আর ঠেকানো সম্ভব হয়নি। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ফিল ফোডেন বল টেনে নিয়ে বক্সের সামনে ডি ব্রুইনাকে দেন। ব্রুইনার পাস আবার খুঁজে নেয় বক্সে ঢুকে পড়া ফোডেনকে। আগেই গা ছেড়ে দেওয়া পিএসজি রক্ষণের কারণে দূরের পোস্টে ফাঁকায় বল পেয়েছেন মাহরেজ। তাঁর শট ঝাঁপিয়েও আটকাতে পারেননি নাভাস।
এরপর একটু পরই কার্ডের ছড়াছড়িময় সে পাঁচ মিনিট হাজির হলো। মেজাজ হারানো নেইমার-ভেরাত্তিরা আর ম্যাচে ফেরার মতো কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেননি। বরং ৭৭ মিনিটে ফোডেনের একটি শট পোস্টে লেগে ফিরেছে।