সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সহজ এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
হোবার্টে বৃষ্টিবিঘ্নিত এই ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ১৪৪ রান তোলে।
জবাবে নেদারল্যান্ডস ১৩৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।
ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ।
প্রায় দেড় দশক পরে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের মূলপর্বে একটি জয় পেল। শেষবার ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ম্যাচে জয় পেয়েছিল।
স্কোরকার্ডে আপাত দৃষ্টিতে সহজ জয় পেলেও বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচেও কিছু বিষয় অস্বস্তির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
তবে একটি জায়গায় বাংলাদেশ ছিল অপ্রতিরোধ্য। সেটা হলো ফাস্ট বোলিং।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ছন্নছাড়া
‘নেদারল্যান্ডস বলে রক্ষা’- বলছেন তৌসিয়া ইসলাম।
বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক তৌসিয়া ইসলাম বলেন, “নতুবা বাংলাদেশ যেমন ব্যাট করেছে মনে হয়েছে আরেকটু অভিজ্ঞ কোনও দল হলে ১৪০ পার করতে পারতো না বাংলাদেশ।”
নাজমুল হোসেন শান্ত ২০ বলে ২৫ রান করেছেন, কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে নির্বিষ এক বলে ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন শান্ত।
তার আগে চারটি চার মেরেছেন কিন্তু ব্যাটের সাথে বলের সংযোগ ভালো বলে মনে হয়নি।
এরপর সৌম্য সরকার প্রায় শরীরের বল ঠেলে মাঠের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ২২ গজও পার করতে পারেননি, বৃত্তের ভেতরেই সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান তিনি।
লিটন দাসও প্রায় একই ধরনের আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন যখন একটা জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন, ছক্কা মারতে গিয়ে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান সাকিব।
লোয়ার মিডল অর্ডারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা
বাংলাদেশ একটা লম্বা ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আজ মাঠে নেমেছিল।
যেখানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ছিলেন আট নম্বর ব্যাটসম্যান।
তিনি ১২ বলে ২০ রানের একটি ইনিংস খেলে কোনওমতে একটা সম্মানজনক স্কোর এনে দেন বাংলাদেশকে।
এর আগে মাঝের ওভারগুলোতে আফিফ হোসেন স্কোরকার্ড সচল রাখেন।
আফিফ ২৭ বলে ৩৮ রানের একটা ইনিংস খেলেন, যেখানে দুটি চার ও দুটি ছক্কা মারেন তিনি।
এই দুজন ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের কেউই টি-টোয়েন্টি সুলভ প্রভাব ফেলতে পারেননি ম্যাচে।
তৌসিয়া ইসলামের মতে বাংলাদেশ আজ যে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে সেটা ছিল রক্ষণাত্মক।
“আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নেমেও একটা ভালো স্কোর করতে পারেনি বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোনও ব্যাটসম্যানের ফিফটি নেই। এসব ব্যাপার শুধু অস্বস্তির নয় শঙ্কারও বিষয়।”
সাকিব আল হাসানের বোলিং
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজ থেকেই সাকিব আল হাসানের বোলিংটা ছিল দলের জন্য একটা দুশ্চিন্তার বিষয়।
ওই সিরিজে ১০ ওভার বল করে ৯১ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি সাকিব।
তিনি নিজেও তখন বলেছিলেন, বোলিংটা মনমতো হচ্ছে না।
এবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও মূল বোলারদের মধ্যে সাকিব ছিলেন সবচেয়ে খরুচে, চার ওভার বল করে ৩২ রান দিয়েছেন ২টি ছক্কা হজম করেছেন তিনি।
এই টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত বা হাতি স্পিনাররা খুব সুবিধা করতে পারছেন না।
যেমন আকশার প্যাটেল গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ওভারে দিয়েছেন ১৮ রান, তারপর আর তাকে বল হাতে দেননি ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজও নো বল, ওয়াইড বল দিয়ে এক ওভারে ১৯ রান হজম করেন। এর আগেও এক ওভারে তিনি ২০ রান দিয়েছিলেন তিনটি ছক্কার মারসহ।
সব মিলিয়ে উইকেটের আচরণ ও মাঠের ধরনের জন্য বাঁহাতি স্পিনারদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় কঠিন এক বিশ্বকাপ হতে পারে।
তৌসিয়া ইসলাম মনে করেন, “বড় টুর্নামেন্টে সাধারণত বাঁহাতি স্পিনারদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। কারণ বড় মাঠ, ভালো উইকেট, এমনভাবে উইকেট বানানো হয় যেখানে রান ভালো হয়। সেখানে সাকিব সম্প্রতি একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বল হাতে।”
সাকিব আল হাসান ও বাংলাদেশের জন্য এটা একটা ভাবনার কারণ হতে পারে যেহেতু তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল টি-টোয়েন্টি বোলার।
ফাস্ট বোলিংটা হয়েছে দুর্দান্ত
তাসকিন আহমেদ বল হাতে নিয়ে প্রথম দুই বলেই ম্যাচের ছন্দ বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসেন।
দুই বলে দুই উইকেট হারানোর পর আর ম্যাচে ফেরেনি নেদারল্যান্ডস।
বিশ্লেষক তৌসিয়া ইসলামের মতে, তাসকিন যে হার্ডওয়ার্কটা মাঠের বাইরে করে এসেছেন সেটারই ফল পাচ্ছেন।
এর আগেও তাসকিন খারাপ সময় পার করে এসে ভালো পারফর্ম করেছেন মাঠে।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাত বছর আগে তাসকিন দারুণ এক বিশ্বকাপ কাটিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদ চার ওভারে ২৫ রান দিয়ে চার উইকেট নেন।
তাসকিনের বলের সুইং ছিল দেখার মতো।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার ছিলেন, তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ের নায়ক।
ওদিকে তরুণ ফাস্ট বোলার হাসান মাহমুদ আজও নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
পনের রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন তিনি, একটি মেইডেনও দিয়েছেন।
হাসান মাহমুদ সম্প্রতি ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দারুণ বল করেছিলেন।
বাংলাদেশের তৃতীয় সিম বোলার হিসেবে আজ একাদশে ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
মুস্তাফিজ উইকেট না পেলেও তার বলে সহজে ব্যাট চালাতে পারেননি নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানরা।
চার ওভারের স্পেলে মুস্তাফিজ ১৮ রান দেন।
বিএসডি/ আর এইচ