নিজস্ব প্রতিবেদক
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় ভুয়া পরিচয়ে এক যুবক ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ও তার দুই সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তাদের আটক করা হয়।
যাদের আটক করা হয়েছে তারা হলেন— কক্সবাজার উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২২ নম্বর ক্যাম্পের ৩৯৫ রুমের আমির হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৩০), সোনাইমুড়ীর জয়াগ ইউনিয়নের বাওর কোট গ্রামের স্বর্ণকার বাড়ির মৃত শফিকুল্লার ছেলে মো. বেলায়েত হোসেন (৪৩) ও একই গ্রামের মো. সেলিম (৭০)।
জানা যায়, নুরুল আমিন নামের ওই রোহিঙ্গা যুবক নিজের নাম পরিবর্তন করে ‘মুনছুর মিয়া’ পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেন। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. শাহজাহান মামুনের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নুরুল আমিন স্বীকার করেন, তিনি মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা এবং বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ার ২২ নম্বর ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে আসা দুই সহযোগী—বেলায়েত হোসেন ও সেলিম—তাকে স্থানীয় বাসিন্দা পরিচয়ে পরিচয়পত্র পেতে সহায়তা করছিলেন।
তারা দাবি করেন, নুরুল আমিন তাদের শ্যালক ও আত্মীয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তিনজনকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. শাহজাহান মামুন বলেন, তাদের আচরণ, তথ্য ও কথা বলায় গরমিল পেলে সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তাদের কাগজপত্রের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা হলে তারা ধরা পড়েন। আটক তিনজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন ফরমে (ফরম-২) নুরুল আমিনের তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া জন্মনিবন্ধন, পিতা-মাতার নাম, এনআইডি নম্বরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তার নাম ও সিল জাল করে দাখিল করা হয়েছিল। এতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং আইনি কাঠামোর মারাত্মক লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করছি।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, এ ঘটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইনসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির অভিযোগে মামলা হয়েছে। সে মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আক্তার বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশি ভোটার বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের কর্মকর্তাদের সতর্কতা না থাকলে ঘটনাটি ধরা পড়ত না। স্থানীয় সচেতন মহল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।