নিজস্ব প্রতিবেদক,
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার বালাডোবার চরের তিন সন্তানের জননী জুলেখা বেগম। এবারের বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে তার বাড়ি। তার বাড়ির পাশে বড় নৌকা ভিড়তে দেখেই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে একবুক পানি মারিয়ে নৌকার নিকট ছুটে আসেন তিনি।
জুলেখা বেগমের মতোই একে একে শিশু সন্তানদের কোলে নিয়ে বুক পানি পেরিয়ে নৌকার কাছে ছুটে আসেন হাবিজা, হাজেরা, আমেনাসহ আরো ১০ থেকে ১২ জন নারী। বালাডোবার চরের বাসিন্দা তারাও। তাদের সবাই ত্রাণের নৌকা ভেবে ছুটে এসেছেন নৌকার কাছে।
পাশে দাড়িয়ে থাকা হাজেরা বেগম নামে অপর এক নারী জানান, তার শিশু সন্তানকে ঠিক মতো খাওয়াতেও পারছেন না তিনি। পার্শ্ববর্তী কোন উঁচু জায়গা না থাকায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতেও পারছেন না। ঘরের ভেতর উঁচু করা চুলায় দিনে একবেলা রান্না করে তা খেয়েই কোনোমতে দিন চলছে তাদের।
একই চরের বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, এই চরের প্রায় শতাধিক পরিবারের বাড়ির ঘরের অর্ধেক পানিতে তলিয়ে আছে। এখন পর্যন্ত মেম্বার বা চেয়ারম্যানদের কেউ তাদের কোন খোঁজ নিতে আসেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ বালাডোর চরের শতাধিক পরিবারের বাড়ির অর্ধেক পর্যন্ত বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এরমধ্যে ৮ থেকে ১০টি পরিবার চরের উচু জায়গায় বা নিজেদের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আর বাকী পরিবারগুলো পানির মধ্যেই জীবন নির্বাহ করছে। টানা ১৫ দিন পানিতে থেকে তাদের হাতে-পায়ে ঘা হতে শুরু করেছে।
১৫ দিনের বেশি সময় ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেগমগন্জের মতো অবস্থা উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার অববাহিকার নতুন জেগে উঠা অন্তত শতাধিক চরের পানিবন্দি মানুষ। চলমান বন্যায় জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পানিবন্দি আড়াই হাজার পরিবারের চাহিদা পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। বন্যা কবলিতদের তালিকা করে বেশি ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে সবার আগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ১২ লাখ টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদ সীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদ সীমার ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিএসডি/ আইপি