নিজস্ব প্রতিবেদক, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় থানা হাজতে হিমাংশু বর্মনের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে জেলা পুলিশ। শনিবার (০৮ জানুয়ারি) রাতে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মারুফা জামালকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, থানার সিসি ক্যামেরা, পুলিশের দায়িত্ব অবহেলাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এ কমিটি তদন্ত করবে। তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে হাতীবান্ধা থানা হাজতে হিমাংশু বর্মনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের তদন্ত হাস্যকর বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যরা দাবি করে বলছেন, যেহেতু থানায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাই অন্য কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তারা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তের দাবি জানান।
এর আগে শুক্রবার সকালে হিমাংশুর স্ত্রী সাবিত্রী রানী নিজ বাড়িতে খুন হয়েছেন বলে জানতে পারে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে হিমাংশুকে স্ত্রীর মরদেহের পাশে দেখতে পান। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাতীবান্ধা থানায় খবর দিলে ওসি এরশাদুল আলমসহ এক দল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন। পরে মরদেহসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হিমাংশু ও তার বড় মেয়ে পিংকিকে (১৩) থানায় নিয়ে আসে।
পুলিশের দাবি, হিমাংশু আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু গ্রামবাসীর প্রশ্ন, হিমাংশু যদি আত্মহত্যা কিংবা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, তাহলে বাড়িতে থাকতে করলেন না কেন? তাদের দাবি, হিমাংশু আত্মহত্যা করেননি। পুলিশ নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে সব সত্য ঘটনা প্রকাশ পাবে বলে ধারণা তাদের।
নিহতের বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মন বলেন, শুক্রবার দুপুরে ছেলেকে থানায় দেখতে গেলে পুলিশ তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে পারলে ছেলে ও নাতনিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তা নাহলে তাদের জেলে পাঠানো হবে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, থানা থেকে ফেরার আগে ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে হিমাংশুর সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়। ওই সময় হিমাংশু বলে, বাবা, পুলিশ আমার কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা দিলে ছেড়ে দেবে, না দিলে আমাকে ও মেয়েকে জেলে পাঠিয়ে দেবে।
তবে টাকা চাওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, হিমাংশু থানার কক্ষে থাকা ওয়াই-ফাইয়ের তার গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হিরণ্ময় বর্মন বলেন, শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে পুলিশ হিমাংশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার গলায় একটি দাগ রয়েছে।
বিএসডি/এসএ