নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া লাশগুলো দ্রুত দাফনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ।
শনিবার (১০ জুলাই) এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার এই পরামর্শ দেন তিনি। এর আগে শুক্রবার (৯ জুলাই) রূপগঞ্জের সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্ধশতাধিক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত এসব শ্রমিকের লাশ বীভৎসভাবে পুড়ে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে কারও পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৫টি মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি মরদেহ রাখা হচ্ছে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে। মরদেহগুলো আপাতত মর্গে রাখা হলেও দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা না করা হলে পচে-গলে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটাবে। ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ জানান, শুক্রবার রাতে তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল ৪৮টি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। দু-একটি ছাড়া বাকি মরদেহগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। তারা ডিএনএর মাধ্যমে নিহতদের পরিচয় খুঁজে বের করতে নমুনা হিসেবে বুকের পাঁজর সংরক্ষণ করেছেন।
তিনি বলেন, লাশগুলো দেখে যেহেতু চেনার কোনো উপায় নেই তাই রানা প্লাজা ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ যেভাবে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছিল তাদের লাশও দ্রুত দাফন করে ফেলা দরকার। এ ব্যাপারে তারা পুলিশের কাছে প্রস্তাবনা ও পরামর্শ দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাশগুলো কখন দাফন করা হবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ভয়াবহভাবে আগুনে পুড়ে লাশগুলো কয়লার মতো হয়ে গেছে। এগুলোতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াবে। এতগুলো লাশ মর্গের মরচুয়েরিতে রাখার মতো ব্যবস্থা নেই। ঢামেকের মরচুয়েরি কুলারে ইতোমধ্যে ১০টি লাশ রয়েছে। এ কারণে রূপগঞ্জের মরদেহগুলো ময়না তদন্ত কক্ষ ও সংলগ্ন আরেকটি ফাঁকা কক্ষে রাখা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকালে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয় এবং আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। পরে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরমধ্যে গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২৯ ঘণ্টা পর ৯ জুলাই রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
বিএসডি/সাজ্জাদ