নাম আমিন আহমেদ। পেশায় সিকিউরিটি গার্ড কিন্তু কাজে করেন প্রতারণা। ইউটিউব দেখে নিজে নিজেই বানিয়ে ফেলেন একটি ওয়েবসাইট, নাম দেন ‘ঢাকা কল গার্ল সার্ভিস’। সেই ওয়েবসাইট ব্যবহার করেই প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, এক সহযোগীসহ আমিনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। একইসঙ্গে বিকাশের এজেন্টকেও আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘একটি অভিযোগের ভিত্তিতে মাঠে নেমে জানা যায়, এই চক্রটির প্রধান আমিন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। পাশাপাশি প্রতারণার কাজে একটি কলগার্ল সার্ভিসের ওয়েবসাইট বানিয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পাশ করা একটা ছেলে এই ধরণের কাজে নেমেছে। সুন্দরী নারীদের ছবি ওয়েবসাইটে আপলোড করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। আসলে এটি কোনো পেশাদার বা কমার্শিয়াল কোনো স্কট সার্ভিস নয়।’
ডিবি কর্মকর্তাদের সামনে প্রতারক আমিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা কল গার্ল সার্ভিসে সুন্দরী বিভিন্ন নারীদের ছবি সংগ্রহ করে আপলোড করা হতো। লেখা থাকত কেউ চাইলে টাকার বিনিময়ে সুন্দরীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। এজন্য একটা মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। সেই নম্বরে কেউ যোগাযোগ করলে আমিন কল রিসিভ করতো। এরপর আমিন জানাত, অগ্রিম হিসেবে ২৬০ টাকা বিকাশে পাঠালে কাঙ্ক্ষিত সুন্দরী মেয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কেউ বিকাশে টাকা পাঠালে ম্যাসেজ দিয়ে জানালে, তাকে বলা হতো কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন নারী আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’
এরপর আমিনের সহযোগী শহিদ অ্যাপ ব্যবহার করে মেয়েলি কণ্ঠে সেই মোবাইল নম্বরে কথা বলত। শহিদ বলেন, ‘কথা শুরুর পরপরই জানতে চাইতাম, কোনো বাসায় নিয়ে যাবেন নাকি স্পটে আসবেন। বাসায় গেলে ১৫০০ টাকা আর স্পটে এসে কাজ সারতে ১০০০ টাকা লাগবে। টাকা অগ্রিম হিসেবে বিকাশে পাঠাতে হবে। টাকা পাঠিয়ে ম্যাসেজ দেন, এরপর আমি আপনার পছন্দ মতো জায়গায় পৌঁছে যাবো। টাকা পাঠানোর পরপরই মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে ফেলা হতো।’
এরপর প্রতারণার শিকার ব্যক্তি আমিনকে জানালেও কাজ হতো না। আমিন তাকে বলতো, ‘ভাই আমি তো আপনাকে মেয়ের নাম্বার দিয়েছি। এখন আপনার ব্যাপার। টাকা দিয়েছেন না কি করেছেন, সেসব একান্তই আপনার বিষয়।’
ডিসি বলেন, ‘শহিদ আলাদা কেউ না, আমিনের সহযোগী হিসেবেই কাজ করত। প্রতারণার টাকা দুজন ভাগ করে নিতো। যে বিকাশ এজেন্টের কাছে টাকা আসত সেই এজেন্টকেও আটক করা হয়েছে। তিনি এই চক্রের সাথে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তবে বিকাশ এজেন্ট বলেছেন, ‘অল্প টাকা তো, তাই নিতে এলেই দিয়ে দিতাম। কখনও বুঝিনি যে, এরা এতবড় একটা প্রতারণার কাজে নাম লেখাবে। কখনও শহিদ আবার কখনও আমিন টাকা তুলতে দোকানে আসত। এদের আগে বা পিছে কিছুই জানতাম না।’
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকায় বেশ কয়েকটি গ্রুপ ভুয়া কল গার্ল সার্ভিসের ওয়েবসাইট খুলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। মান সম্মানের ভয়ে প্রতারিত কেউ পুলিশের কাছে আসে না এবং কোনো অভিযোগ করে না। যার ফলে এই অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তবে এবার গোয়েন্দা পুলিশ এরকম অপরাধীদের ধরতে মাঠে নেমেছে।