লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
বাজারে এখন পেয়ারা সহজলভ্য। পেয়ারা খেতে ছোট-বড় সবাই পছন্দ করেন। শুধু স্বাদেই নয় এ ফলের স্বাস্থ্যগুণও অনেক। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে পেয়ারা।
জানলে অবাক হবেন, শুধু পেয়ারা নয় এর পাতাও স্বাস্থের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ডায়াবেটিস সারাতে পেয়ারা ও এর পাতা দুর্দান্ত কার্যকরী।
পেয়ারা ও এর পাতায় আছে হাইপোগ্লাইসেমিক বা গ্লুকোজবিরোধী প্রভাব। যা রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারায় থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড।
এতে আরও আছে বেশ কিছু ক্যারোটিনয়েড (এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) যেমন বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপিন, লুটিন, গামা-ক্যারোটিন, বিটা-ক্রিপ্টক্সানথিন, ক্রিপ্টো ফ্ল্যাভিন, রুবিক্সানথিন ও নিওক্রোম।
এছাড়াও পেয়ারায় আছে ফেনোলিক যৌগ। যেমন- অ্যান্থোসায়ানিনস, মাইরিসেটিন ও এলাজিক এসিড। পেয়ারায় আরও আছে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন- লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস।
একইসঙ্গে পেয়ারা পাতায় আছে অনেক মাইক্রো, ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস ও বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতায় ১৮.৫৩ শতাংশ প্রোটিন, ১০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ১৭১৭ মিলিগ্রাম গ্যালিক অ্যাসিড আছে।
এছাড়াও পেয়ারা পাতায় আছে পলিস্যাকারাইড, প্রোটিন, কোয়ারসেটিন, ফ্ল্যাভোনয়েডস, গ্যালিক অ্যাসিড, ক্যাফিক অ্যাসিড, ফেরুলিক অ্যাসিড, ক্যাটেচিন, কেমফেরল, এপিকেটেকিন ও হাইপারিন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারার উপকারিতার বিষয়ে কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন পেয়ারা খেলে কমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। আরেকটি গবেষণা অনুসারে, ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে। একইসঙ্গে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বশে থাকে। যা হৃদরোগের জটিলতা কমায়।
পেয়ারা শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ পেয়ারায় থাকে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন (এক ধরনের ডায়েটারি ফাইবার)। যা অন্ত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজ শোষণে বিলম্ব করে, ফলে শরীরে হঠাৎ করে চিনি বৃদ্ধি পায় না।
এছাড়াও পেয়ারা ফ্লেভোনয়েড গ্লাইকোসাইড সমৃদ্ধ। এটি শক্তিশালী এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ডায়াবেটিসবিরোধী ফ্ল্যাভোনয়েড হিসেবে বিবেচিত, যেমন- স্ট্রিক্টিনিন, ইসোস্ট্রিক্টিনিন ও পেডুনকুলাগিন। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ইউএসডিএ অনুসারে, ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ২২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে বিরাট ভূমিকা রাখে। এর ফলে পেরিফেরাল টিস্যু, কার্ডিয়াক টিস্যু, কঙ্কালের টিস্যু ও অ্যাডিপোজ টিস্যুতে সহজেই ইনসুলিন প্রবেশ করতে পারে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পায়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
শুধু পেয়ারা নয় পেয়ারার পাতাতেও ডায়াবেটিসবিরোধী উপাদান আছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেআজও ওষুধ হিসেবে পেয়ারার পাতা ব্যবহৃত হয়। পেয়ারা পাতায় ডায়াবেটিসবিরোধী প্রভাব আছে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর বলে বিবেচিত। যদিও এ বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
খাবার পরে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে পেয়ারা পাতার নির্যাস পান করতে পারে। এক্ষেত্রে পেয়ারার পাতা পরিষ্কার করে ১০-১২ মিনিট পানিতে ফুটিয়ে তা চায়ের মতো পান করতে পারেন। এই পানীয়তে থাকে অ্যালজিক অ্যাসিড, সায়ানিডিন ও অন্যান্য পলিফেনল। খাবারের পর এটি সেবনে রক্তে শর্করার পরিমাণ ৩৭.৮ শতাংশ কমে যায়।
কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস রোগীরা যদি ৫-৭ সপ্তাহের জন্য পেয়ারা পাতার চা নিয়মিত পান করেন তাহলে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক থাকবে, নেফ্রোপ্যাথি ও স্থূলতার মতো ডায়াবেটিস জটিলতা কমায়। এমনকি লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতেও পেয়ারা পাতার চা খেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবার খাওয়ার পর ডায়াবেটিস রোগীর উচিত পেয়ারা পাতার চা পান করা। কখনও খালি পেটে পেয়ারা খাবেন না। কারণ এটি অম্লীয় প্রকৃতির, তাই পেটে অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। পেয়ারা খাওয়ার সর্বোত্তম সময় হলো খাবারের মাঝে।
বিএসডি/এএ