সামছুল আলম সাদ্দাম
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় কেন্দ্র সচিবসহ তিন শিক্ষকের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সর্বত্র আলোচনা চলছে। প্রশ্নপত্র সংরক্ষণের প্রধান দায়িত্ব থাকে কেন্দ্র সচিবের কাছে। তিনিই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। একটি-দুটি নয়, তিনি নিজেই সাতটি বিষয়ের প্রশ্নফাঁস করেছেন।
এজন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। নজিরবিহীন এমন ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে। এ ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগে বড় আকারে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালে। এরপর ২০১৭ সালেও একবার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আসে। প্রশ্নফাঁস এখন আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটা কালব্যাধি হয়ে দেখা দিয়েছে।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, পাবলিক পরীক্ষা, চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের বার্ষিক পরীক্ষা কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না প্রশ্নফাঁস চক্রের থাবা থেকে। অথচ শুরুর দিকে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকারই করত না সরকার তথা মন্ত্রণালয়। এখন স্বীকার করলেও বাস্তবতা হলো সরকারের কর্তাব্যক্তিদের প্রশ্নফাঁস রোধে নেয়া নানা ব্যবস্থার কোনো কার্যকর ফল দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎপর হওয়া আশার আলো দেখালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুদকের মতানৈক্য আমাদের হতাশ করছে। দুদকের ‘শিক্ষাসংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিমের’ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ সরকারি প্রেস (বিজি প্রেস), ট্রেজারি ও পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের ‘অসাধু’ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও বিভিন্ন অপরাধী চক্রও যুক্ত থাকতে পারেন বলে দুদকের তদন্তকারীদের ধারণা। প্রশ্নফাঁস, নোট-গাইড, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে ৩৯ দফা সুপারিশসহ ওই প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে পাঠানো হয়। বিষয়গুলোর আলোর মুখ দেখেনি। দেশের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি এখন আর নতুন কিছু নয়। আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমান প্রজন্ম কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগে শিক্ষাজীবনেই দুর্নীতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতির এক অভিনব পদ্ধতি প্রশ্নপত্র ফাঁস। অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার এই যে, শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর আগে কয়েকজন শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের শাস্তি দেয়া হয়নি। কেন হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই রয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের উপায়।
সদুপদেশ কিংবা ভর্ৎসনায় কাজ না হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি, প্রশ্নফাঁস রোধে প্রশ্ন ছাপা ও বিতরণের কাজে জড়িত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখার সুযোগ নেই। প্রশ্নফাঁস রোধ করতেই হবে। এর জন্য ফাঁসের সবক’টা রন্ধ্র বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।
লেখক- সাংবাদিক