রাজধানীর বনানী এলাকায় অবস্থিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড ও ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে তালা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলমান অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে এটি বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি অধিদপ্তরের।
যদিও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছে অধিদপ্তর। একটি প্রভাবশালী মহল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দখলের পাঁয়তারা করছে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বনানীর এই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে মালিকপক্ষ জানিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক অভিযানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই কার্যক্রম বন্ধ করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবারও অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইরতেজা হাসান। তবে কী কারণে এই অভিযান এবং কেন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এবিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক খন্দকার আশফাক অভিযোগ করে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কিছু ব্যক্তির ইন্ধনে বন্ধ থাকা ক্লিনিকে পরিদর্শনের নামে তালা লাগিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে অতি উৎসাহী হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম বন্ধ করতে একের পর এক নোটিশ দিয়ে আসছিল।
তিনি বলেন, একের পর এক অভিযানের কারণে আমরা নিজেরাই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম। অথচ আজ আবার এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করে এবং গেটে তালা ঝুলিয়ে নোটিশে লিখে দেয় ‘অনিবার্য কারণবশত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লি. সাময়িক বন্ধ থাকবে।’
খন্দকার আসফাক আরও বলেন, গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে। পরবর্তীতে একটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য; অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণের হয়রানি; মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অভিযোগ আনা আনা হয়।
পরবর্তীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই আদেশের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আপিল করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়। পরে নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করলেও তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। এরপর আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছি।
তিনি আরও বলেন, রিটটি এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এরপরও তারা আজ আবার এসে বন্ধ ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসা প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার দখলে নিতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তারাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগসাজশ করে অভিযানের নামে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করেছে।
অভিযানে থাকা বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে আসবেন জানিয়ে আমাদের সহায়তা চান। পরে থানা পুলিশ সেখানে গিয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. বিল্লাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বনানীতে আমাদের একটা মোবাইল টিমের অভিযান ছিল শুনেছি। কিন্তু এই অভিযানে আমি ছিলাম না। যতটুকু জেনেছি চলমান অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযানের একটি অংশ হিসেবেই আজকে সেখানে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি এই মুহূর্তে ঢাকার বাইরে অবস্থা করছি। যে কারণে ঠিক কী অভিযোগে অভিযান ছিল, সেটা আমি বলতে পারব না। এ বিষয়ে পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
বিএস/এলএম