সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকের একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন রক্ষণশীল আইনপ্রণেতারা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফেসবুককে তাদের কৃতকর্মের জন্য রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।
৫ মে ট্রাম্পের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা ঘটনার পরদিন ফেসবুক ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। উসকানিমূলক বক্তব্য ও ফেসবুকের নীতিমালার সঙ্গে যায় না—এমন সব ভিডিও-ছবি প্রকাশের কারণেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ফেসবুকের ওভারসাইট বোর্ড পর্যালোচনা করে বলেছে, ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত একটি আদর্শ সিদ্ধান্ত ছিল না। অন্য ব্যবহারকারীদের জন্য যে নিয়ম অনুসরণ করা হয়, তাঁর ক্ষেত্রেও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ফেসবুককে এ বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে বলেছে ওভারসাইট বোর্ড। এ আদেশের অর্থ দাঁড়ায়, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আপাতত বহালই থাকছে।
ট্রাম্প এক বিবৃতিতে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ফেসবুক, টুইটার ও গুগল যা করেছে, তা আমেরিকার জন্য চরম বিব্রতকর, অপমানজনক। ফলে, এসব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানকে তাদের এমন কৃতকর্মের জন্য রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে বলে তিনি হুমকি দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের (যখন তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন) কাছ থেকে স্বাধীনভাবে কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নৈরাজ্যবাদী বামেরা সত্যকে ভয় পায় বলে এমন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, সত্য এমনিতেই বেরিয়ে আসবে আরও বড় ও শক্তশালী হয়ে। আমেরিকার জনগণ এসব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে দাঁড়াবে না বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
সামাজিক যোগাযোগের এসব প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমেরিকার গণতন্ত্র ও নির্বাচনপদ্ধতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার সুযোগ এদের আর দেওয়া হবে না।
ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা মার্ক মেডৌস ফেসবুকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত জানার পর এক বিবৃতিতে বলেছেন, আজ আমেরিকার জন্য একটি শোকের দিন। ফেসবুকের জন্যও দিনটি শোকের। ফেসবুকের একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করার জন্য আমেরিকার আইনপ্রণেতারা উদ্যোগী হবেন। ফেসবুক তাদের নিজেদের পক্ষের লোকজনের মতো ট্রাম্পকে তাঁর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান না করে নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে।
রিপাবলিকান সিনেটর মার্শা ব্ল্যাকবার্ন বলেছেন, ট্রাম্পকে ফেসবুকে নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত শুনে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট। মার্ক জাকারবার্গ নিজেকে স্বাধীন মতপ্রকাশের একচেটিয়া মধ্যস্থতাকারী মনে করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিকি হ্যালি বলেছেন, বিশ্বের বহু জঙ্গি-সন্ত্রাসীর প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক ও টুইটার। ট্রাম্পের প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানের দ্বৈতনীতির কারণে আমেরিকার জনগণ তাদের আর বিশ্বাস করে না।
রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ বলেছেন, সব উদারনৈতিক ফেসবুকে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ রাখার বিষয়টি উদ্যাপন করছেন।
প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি বলেছেন, ফেসবুক স্বাধীন কথা বলা ও অবাধ বিতর্কের বদলে ডেমোক্রেটিক পার্টির সুপারপ্যাকের মতো কাজ করতে বেশি আগ্রহী। আজ ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, কাল সব রক্ষণশীলের ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান একই আচরণ করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্য দিয়েই এসব প্রতিষ্ঠানের এমন তৎপরতা বন্ধ করা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফেসবুকে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকার সিদ্ধান্ত আসার এক দিন আগেই ট্রাম্প যোগাযোগের জন্য নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম চালু করেছেন। ‘ফ্রম দ্য ডেস্ক অব ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প’ নামের নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছেন তিনি। অনুরাগী-অনুসারীরা এ প্ল্যাটফর্মে নাম নিবন্ধন করে ট্রাম্পের বক্তব্য জানতে পারবেন। এখন পর্যন্ত এ প্ল্যাটফর্মে শুধু ট্রাম্পই বলবেন। সেখানে অন্য কারও মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই।