পর্যটন ডেস্ক,
প্রায় পাঁচ মাস পর খুলে দেওয়া হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।
প্রথম দিনে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) দর্শণার্থী কম থাকলেও শনিবার (২১ আগস্ট) পার্কে ভিড় বেড়েছে।
পার্কটিতে দীর্ঘদিন পর আসা দর্শণার্থীরা সবুজের সমারোহ ভরা প্রাকৃতিক পরিবেশে মুগ্ধ হচ্ছে। তা ছাড়া পার্কে বেড়েছে প্রাণির সংখ্যাও। যা দর্শণার্থীদের আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া এলাকা থেকে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে সাফারি পার্কে ঘুরতে এসেছেন জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন লকডাউনে পার্ক বন্ধ থাকায় ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে ঘুরতে পারিনি। ছেলে-মেয়েরা তাদের স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে বোরিং ফিল করছিলো। সকালে টিভিতে সন্তানেরা দেখলো সাফারি পার্ক খুলে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তারা এ ঘোষণা দেখে আবদার করলো। তাই তাদেরকে নিয়ে সাফারি পার্কে চলে এসেছি। পার্কে আগের চেয়ে প্রাণির সংখ্যা বেড়েছে। ঘুরে ভালই লাগছে।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা এলাকার রফিকুল, এমদাদ, সোহাগসহ তারা ১০ বন্ধু সাফারি পার্কে ঘুরতে এসেছেন।
তারা জানালেন, ঘুরে মজা পাচ্ছেন। ভিড় কম থাকায় করোনার ভয়টা এখন নেই। হয়তো সামনে থেকে দর্শণার্থীদের সমাগম আরো বেশি হতে পারে।
লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বদরুল হোসেন মিলন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে সাফারি পার্কের যে সংযোগ সড়ক রয়েছে তা চলাচলের জন্য একবারেই অনুপযোগী। এ সড়কটি সংষ্কার করা খুবই জরুরী। এটি চিত্ত বিনোদনে দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দর একটা জায়গা। অথচ সড়কের করুণ অবস্থার জন্য অনেকটাই দুর্ভোগের শিকার হতে হয় সাফারি পার্কে আসা দর্শনার্থীদের।
ফিরোজ আলম রাজশাহী থেকে এসেছেন পার্কে ঘুরতে। তিনি জানালেন, দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে অনেকটা বন্দি দশায় ছিলেন। বিনোদনের এসব প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় মানুষের মধ্যেও উৎফুল্ল পরিবেশ বিরাজ করছে।
রাজশাহীর বাসিন্দা বুলবুল ইসলাম কাজ করেন তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনি বললেন, তারা সাত বন্ধু ঘুরতে এসেছেন। পার্কের ভেতর সবুজের সমারোহ নতুন বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। কোর সাফারিতে কর্মীরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। কিছু কিছু হিংস্র প্রাণী এখনো দর্শণার্থীদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়নি।
কোর সাফারির ইজারাদারের পক্ষে নাবিল ইসলাম বলেন, সকালে যে দর্শণার্থী এসেছেন অন্যান্য দিন এসময়ে তা অনেক বেশি থাকে। আশা করা হচ্ছে কয়েকদিন পর দর্শণার্থীদের ভিড় আরো বাড়বে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, করোনার কারণে দীর্ষদিন পার্ক বন্ধ থাকার পর শুক্রবার থেকে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পার্ক বন্ধ থাকাবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এখানের বন্য প্রাণীগুলোর প্রজনন অনেকটা বেড়েছে। ওয়াইল্ড বিস্টের ৬টা বাচ্চা হয়েছে। ৬টা জেব্রার বাচ্চা হয়েছে, এর সংখ্যা এখন ২৯। হরিণ বাচ্চা দিয়েছে ১৫টি। ময়ূরের বাচ্চা হয়েছে ৩৫টি। এসব প্রাণীর জন্ম খুব স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। যেহেতু এখানে কোনো কোলাহল ছিল না লোকজনের ডিস্টার্ব ছিল না। বর্তমানে এগুলো দর্শণার্থীদের জন্য বাড়তি একটি আকর্ষণ।
সাফারি পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশেও বৈচিত্র এসেছে। এখানকার গাছগুলোতে অসংখ্য পাখি বাসা বেঁধেছে। পানকৌড়ি, তেলা ঘুঘুসহ অসংখ্য প্রজাতির ঘুঘু, বক প্রকৃতিতে পাখিতে ভরপুর। যে পাখিগুলো বাসা বেঁধেছে সেগুলো বাচ্চা দিয়েছে। সবমিলিয়ে পার্ক এখন পাখির রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
বিএসডি/আইপি