নিজস্ব প্রতিবেদক:
৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এখনও রক্ত কণিকায় কাঁপন ধরায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার (৭ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ৭ই মার্চের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবারের এই মার্চ জাতি পালন করেছে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ, উচ্ছ্বাস আর শপথের বলিষ্ঠতায়। জাতি স্মরণ করেছে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের সেই অবিনাশী কণ্ঠের বজ্রনিনাদ, মুগ্ধ মনোযোগে এখনও কোটি বাঙালি শোনে ‘রাজনীতির কবি’র সেই অমর কাব্যগাঁথা— যা অর্ধশত বছর পরও কত জীবন্ত, কত কাব্যিক। রক্ত কণিকায় এখনও কাঁপন ধরায় সেই ভাষণ। সেই শব্দমালা। শব্দ কর্তৃত্ব করে, নেতৃত্ব দেয়, দ্যুতি ছড়ায়, বিদ্রোহে রসদ যোগায়। শব্দ কোটি মানুষকে গ্রন্থিত করে এক সূত্রে। হাজার পূর্বপুরুষের রক্তের প্রতিশোধ নিতে কম্পন তোলে অস্তিত্বে। আর এ কম্পনের অপর নাম ৭ই মার্চ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ, এতে করে আমরা আত্মবিশ্বাসী। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল প্রত্যাশা জাগানিয়া স্ফুরণ। মহান স্বাধীনতা অর্জনের পথনকশা। আর অর্ধশত বছর পর তারই সুযোগ্যকন্যা সে প্রত্যাশা পূরণের সোনালী দিগন্তের উন্মোচক। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে, স্বল্পোন্নত দেশের সিঁড়ি বেয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত। আপনি দেশকে উত্তরণের যে উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাতে আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী এবং প্রত্যয়ী এক জাতি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আপনি কোটি তরুণের প্রাণে বপন করেছেন, তা ফুটতে শুরু করেছে। তাদের হাত ধরেই এ দেশ পৌঁছে যাবে অর্জনের উচ্চ সোপানে, স্বপ্নের সোনার বাংলায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জয় বাংলা’ সতের কোটি মানুষের প্রাণের স্লোগান। আপনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে ‘জয় বাংলা’ আজ বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগান। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের মাধ্যমে বাঙালি পেয়েছিল স্বাধীনতার শক্তি। আজ এ স্লোগান ধারণ করে এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মানুষ দেশ গঠনে উজ্জীবিত হবে আপনার নেতৃত্বে। এ সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অভিনন্দন।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দেয়। পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে মত্ত হয়ে ওঠে। বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দিতে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালায়। কিন্তু কোনো বাধাই রুখতে পারেনি বাঙালির অধিকার আদায়ের ক্লান্তিহীন সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু জানতেন, স্বাধীনতা কখনও অন্যের পায়ে ভর করে আসে না, অন্যের ওপর ভরসা করে আসে না। কারও করুণা বা অনুগ্রহে আত্মমুক্তি অর্জন করা সম্ভব হয় না। তাই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শোনালেন আত্মমুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হওয়ার অমর ও অক্ষয় বাণী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সেরা ভাষণগুলোর মধ্যে আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ এড্রেস’, উইনস্টন চার্চিলের ‘উই শ্যাল ফাইট অন দি বিচেস’, নেহেরুর ‘ট্রাইস্ট উইথ ডেসটিনি’, মার্টিন লুথার কিং-এর ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’-এর চেয়ে অধিক বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত ছিল বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ। একটি ভাষণে নিখাদ মৌলিকত্বের সঙ্গে জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার কাব্যিক ঘোষণা সত্যিই ইতিহাসে বিরল। এ ভাষণের পর বিশ্ববিখ্যাত সাময়িকী ‘দি নিউজ উইক’ বঙ্গবন্ধুকে ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ বা ‘রাজনীতির কবি’ অভিধায় অভিষিক্ত করে। দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু তাৎক্ষণিক প্রয়োজন নয়, ৭ই মার্চের ভাষণে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবিক ঔদার্য, সামরিক কৌশল ও রাজনৈতিক আন্দোলন সংঘটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে চিরকালীন ও সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-মূল্যবোধের অনেক কিছুই বিকৃতির নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্র করে বদলে ফেলা হয়েছিল। আর এরই সঙ্গে ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচার ও প্রসারে তৈরি করা হয়েছিল প্রতিবন্ধকতা। আজ যারা কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, যারা বাকস্বাধীনতার কথা বলেন, তারাই এ ভাষণ বাজানোতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানোর অপরাধে জীবন দিতে হয়েছে, হতে হয়েছে নির্মম অত্যাচারের শিকার।
তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্র যেমন আগে ছিল, তেমনই এখনও আছে। আমরা বাতাসে এখনও ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে হবে। যেকোনো অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙে দিতে পারে আমাদের ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মূলোৎপাটনে ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার দ্বীপশিখা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাহজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দিপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ।
বিএসডি/ এলএল