ডেস্ক নিউজ-
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় রাজধানীতে মসলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। এতে খুচরা বাজারে কমেছে মসলার সরবরাহ। তাতেই মসলা কিনতে এখন বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে চলমান বিধিনিষেদের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও কাঁচাবাজার খোলার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এতে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার যেমন বসছে তেমন খুলছে মুদি দোকান। এসব বাজার ও দোকান থেকে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন।
কিন্তু পাইকারি বাজার বন্ধ থাকায় মসলার এক ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন মসলার দাম বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হলুদ ও আদার দাম।
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, যা বিধিনিষেধের আগে ছিল ১৭০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
বিধিনিষেধের আগে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া হলুদের দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকায়। দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।
বিধিনিষেধের আগে খুচরা পর্যায়ে জিরার কেজি ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এখন তা বেড়ে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
বিভিন্ন মসলার দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর প্রতিবেদনেও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে শুকনা মরিচের ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, দেশি হলুদের ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আমদানি করা হলুদের ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, দেশি আদার ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ, আমদানি করা আদার ৪৪ শতাংশ, জিরার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং দারুচিনির ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।
বিভিন্ন মসলার দাম বাড়ার বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, পাইকারি বাজারে মসলা পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের আগে কেনা ছিল সেই মাল এখন বিক্রি করছি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে মসলার দাম আরও বাড়বে। কারণ কোরবানির ঈদ কাছাকাছি চলে এসেছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী ইয়াসিন বলেন, সরবরাহ না থাকায় এখন মসলার দাম একটু বেশি। চাহিদার তুলনায় এখন সব ধরনের মসলার সরবরাহ কম। তাছাড়া কোরবানির ঈদের এ প্রায় ১৫ দিন বাকি আছে। স্বাভাবিকভাবেই সামনে মসলার দাম বাড়বে।
খুচরা বিক্রেতারা কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করলেও পাইকাররা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, এবার কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলার সরবরাহ রয়েছে।
এ বিষয়ে পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, এবার কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ মসলার সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। আমাদের কাছে প্রচুর মসলা আমদানি করা আছে।
তিনি বলেন, সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় বৃহস্পতিবার থেকে আমরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিলাম। তবে আজ বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন- আমরা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে পারব। তাই আগামীকাল থেকে মৌলভীবাজারের মসলার দোকান খোলা থাকবে। কেউ কেউ আজ থেকেই দোকান খুলবেন।
তিনি আরও বলেন, পাইকারি দোকান বন্ধ থাকায় খুচরা পর্যায়ে মসলার দাম একটু বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে কোনো মসলার দাম বাড়েনি। বরং কিছু কিছু মসলার দাম কমেছে। এখন পাইকারি বাজার খুলে গেলে খুচরা পর্যায়ে মসলার দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।
মৌলভীবাজারের মসলার পাইকারি ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, বিধিনিষেধের কারণে পাইকারি বাজার বন্ধ। এই বন্ধের সুযোগ নিয়ে হয়তো খুচরা ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হলো পাইকারিতে কোনো মসলার দাম বাড়েনি। বরং সব ধরনের মসলার দাম অন্য সময়ের তুলনায় কম। এর কারণ আমদানি বেশি, কিন্তু বিক্রি নেই।
তিনি বলেন, পাইকারিতে ভারতীয় জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। দারুচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে এই দামে জিরা ও দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে। মাঝে লবঙ্গের দাম বেড়ে কেজি এক হাজার টাকার ওপরে হয়েছিল। এখন তা কমে ৯৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এলাচের দামও কমেছে। আগে যে এলাচ ২৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি এখন তা ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাজ্জাদ/সুমন