বাইরে থেকে সম্পর্কটা যতটা চমৎকার মনে হতো আদতে বিল গেটস আর মেলিন্ডা গেটসের মধ্যে ততটা সুসম্পর্ক ছিল না। গেটসের নানা আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল মেলিন্ডার কাছে। জানাশোনাদের মধ্যেও চলত কানাঘুষা। দুজনের বিচ্ছেদের পর যেন সে সবকিছুই একে একে উঠে আসছে।
মার্কিন ধনকুবেরের কাছের দুজন ব্যক্তি জানান, ২০১৮ সালে মাইক্রোসফটের দীর্ঘদিনের অর্থ ব্যবস্থাপকের মাইকেল লারসনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনা বিল গেটস যেভাবে সামলেছেন, তা পছন্দ হয়নি মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের। বিল গেটস বিষয়টি গোপনে আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিলেন, অন্যদিকে মেলিন্ডা চেয়েছিলেন বাইরের কোনো সংস্থাকে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করার। তবে বিল গেটসের কারণে জল বেশি দূর গড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত লারসেনের কিছুই হয়নি এবং তিনি তাঁর দায়িত্বে বহাল ছিলেন।
বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে মাইক্রোসফট ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে কর্মরত নারীদের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন বিল গেটস। ফাউন্ডেশনের অনেক বৈঠকেও বিল গেটস মেলিন্ডাকে উপেক্ষা করতেন। কোয়ার্টজ ডটকমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্যই উঠে এসেছে।
মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল গেটসের ভালো সম্পর্ক নিয়েও বিরক্ত ছিলেন মেলিন্ডা। ২০১১ সালের শুরু থেকে এপস্টেইনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় বিল গেটসের। অথচ এর আগেই এই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে জঘন্য সব অভিযোগ ওঠে। নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের জোরপূর্বক যৌনকর্মে অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। ২০০৮ সালের ৬ জুলাই নিউ জার্সিতে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তারও করা হয় তাঁকে। অথচ সবকিছু জেনেও প্রায়ই এপস্টেইনের পার্টিতে যেতেন গেটস।
২০১৯ সালের অক্টোবরে গেটস ও এপস্টেইনের মধ্যকার সম্পর্ক যখন ব্যাপকভাবে জনসাধারণের চোখে পড়া শুরু করে, তীব্র অসন্তুষ্ট হন মেলিন্ডা। তিনি বিবাহবিচ্ছেদের আইনজীবীদের নিয়োগ করেন। সেই থেকে শুরু যার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হলো এ বছর।
এ মাসের শুরুতে ২৭ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। তাঁদের বিচ্ছেদের কী কারণ, সে বিষয়ে দুজনের মুখ পুরো বন্ধ থাকলেও হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের গণমাধ্যম। কারণ, তাঁদের শুরুটা ছিল একদম রোমান্টিক গল্পের মতো। বিল গেটস ও মেলিন্ডার সম্পর্কের শুরুটা ছিল পেশাভিত্তিক। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ১৯৮৭ সালে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। ওই বছরই প্রতিষ্ঠানের একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। এ ঘটনা ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। এরপর দুজনের সামনে এগিয়ে যাওয়া। শুরু হয় তাঁদের তুমুল প্রেম। প্রেম শুরুর সাত বছর পর ১৯৯৪ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। এরপর সবকিছুই ভালো চলছিল। তবে ২০০৬ সালে বিতর্ক ওঠে। মাইক্রোসফটের একটি বৈঠকে এক নারী কর্মীর প্রেজেন্টেশনের সময় উপস্থিত ছিলেন বিল গেটস। বৈঠক শেষে ওই কর্মীকে তিনি বার্তা পাঠান ডিনারের। এ রকম নানা ধরনের ছোট ছোট ঘটনায় তিক্ততা বাড়ে দুজনের সম্পর্কে।
সর্বশেষ জানা যায়, ২০২০ মাইক্রোসফটের বোর্ড থেকে সরে যাওয়ার পেছনেও একটি ঘটনা রয়েছে। মাইক্রোসফটের এক কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বিল গেটস। তা–ও ২০০০ সালের দিকে। ২০১৯ সালে সেই ঘটনায় প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল মাইক্রোসফট করপোরেশন। তার জেরেই আন্তর্জাতিক এই সংস্থার বোর্ড থেকে সরে দাঁড়াতে হয় বিল গেটসকে।