আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বাংলাদেশে চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে পাকিস্তানের রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে পাকিস্তানের রফতানি আগের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে বলে রোববার দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ডন বলছে, পাকিস্তানের এই রফতানি গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের ১২৭ দশমিক ৪৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ২০২১ সালের একই সময়ে ১৭৫ দশমিক ৩৮৯ মিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের আমদানিও ব্যাপক বেড়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের আমদানির পরিমাণ ১২ দশমিক ১১৮ মিলিয়ন ডলার হলেও চলতি বছরের একই সময়ে তা ৪৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ১৭ দশমিক ৪৪৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক বছর আগের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে আঞ্চলিক ৯টি দেশে পাকিস্তানের রফতানি ৩১.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে দেশটির আমদানিও বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ।
এসবিপি বলেছে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ইরান, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপে দেশটির রফতানির পরিমাণ ৯৪৬ দশমিক ২১৮ মিলিয়ন ডলার। যা পাকিস্তানের মোট বৈশ্বিক ৬ দশমিক ৯৯৭ বিলিয়ন ডলারের মাত্র ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের রফতানির শীর্ষে আছে চীন। এরপরই আছে জনবহুল ভারত এবং বাংলাদেশ। এছাড়াও সমুদ্র পথে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান এবং মালদ্বীপের সঙ্গেও পাকিস্তানের সীমান্ত বাণিজ্য রয়েছে।
অন্যদিকে, এসব দেশ থেকে পাকিস্তানের আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ১২৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রতিবেশি এসব দেশ থেকে পাকিস্তানের আমদানি ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপুল পরিমাণ আমদানির ফলে চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই অঞ্চলের সাথে পাকিস্তানের বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়েছে।
তবে চলতি বছরে চীনে পাকিস্তানের রফতানি প্রবৃদ্ধির হারে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। পাকিস্তানের মোট আঞ্চলিক রফতানির প্রায় ৫৯ শতাংশই চীনে হয়েছে; দেশটির বাকি রফতানি হয়েছে প্রতিবেশি অন্যান্য ৮ দেশে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনে পাকিস্তানের রফতানি ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫৯ দশমিক ১৫৮ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর দেশটিতে পাকিস্তানের এই রফতানির পরিমাণ ছিল ৩২৯ দশমিক ৪২১ মিলিয়ন ডলার।
করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে দেশটির চাল রফতানি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারি পরবর্তীতে দেশটির আমদানিও বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। এর বিপরীতে চীন থেকে পাকিস্তানের আমদানি ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ০১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
গত বছরে দেশটি থেকে পাকিস্তানের আমদানির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭৯৩ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের আঞ্চলিক মোট আমদানির প্রায় ৯৭ দশমিক ১ শতাংশই আসে চীন থেকে।
তবে চিরবৈরী প্রতিবেশি ভারতে পাকিস্তানের রফতানির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রায় ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারতে পাকিস্তানের রফতানির পরিমাণ ১ দশমিক ০৩৫ মিলিয়ন ডলার হলেও চলতি বছরের একই সময়ে তা ০ দশমিক ০৯৯ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
একই সঙ্গে ভারত থেকে পাকিস্তানের আমদানিও ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। গত বছরের একই সময়ে ৪৯ দশমিক ৯৪৭ মিলিয়ন ডলারের আমদানি হলেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তা কমে ৪২ দশমিক ৫০২ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত রয়েছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার ভারত থেকে শুধুমাত্র ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
সূত্র: ডন।