নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত ইয়াছিন লিটন (৪০) ও জাকির হোসেন মিল্লাতের (২০) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। অন্যদিকে, দুই বছরের ব্যবধানে একই এলাকায় বিএসএফের এমন কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় মানুষজন।
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে পরশুরাম পৌরসভার বাসপদুয়া এলাকায় জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে নিহতদের মরদেহ নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় স্বজনদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। পরে বৃষ্টির মধ্যে গ্রামবাসী তাদের জানাজার নামাজ আদায় করেন। এতে নিহত লিটনের জানাজায় ইমামতি করেন গুথুমা চৌমুড়ি দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মীর আহমদ ও মিল্লাতের জানাজার নামাজ পড়ান তার বড় ভাই হাফেজ নুরুন্নবী পারভেজ। এ সময় পরশুরাম মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিলেন।
লিটনের বাবা মনির আহমদ বলেন, আমার ছেলে টমটম চালিয়ে ও টিউবওয়েলের কাজ করে সংসার চালাতো। পরিবারে তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এখন তাদের কে দেখবে?
নিহত মিল্লাতের ভাই নুরুন্নবী পারভেজ বলেন, আমার ভাই প্রবাসে যেতে পাসপোর্ট তৈরি করেছিল। এভাবে ভাইকে হারাতে হবে তা কখনো কল্পনা করিনি। এ বেদনা কতটা ভারি, তা বলে বোঝাতে পারব না।
এর আগে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর বাসপদুয়া সীমান্ত থেকে কৃষক মেজবাহারকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। তাকে গুলি করে হত্যার ১৭ দিন পর মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছিল। এবার আবারও বিএসএফের এমন কাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, তারা এভাবে মানুষ খুন করবে, আর আমরা কোনো কিছু বলতে পারব না। এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে যদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যথাযথ জবাব চাওয়া হতো তাহলে বারবার এমন কিছু দেখতে হতো না। এখন সীমান্তের আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছে।
এ ব্যাপারে পরশুরাম মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে সামাজিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার গুথুমা বিওপির আওতাধীন ২১৬৪/৩এস পিলার অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে তারকাঁটা বাউন্ডারির কাছে যান লিটন, মিল্লাত ও আফছার। তখন তাদের লক্ষ্য করে বিএসএফের সদস্যরা গুলি ছোড়েন। এ সময় গুলিবিদ্ধ লিটনকে ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ। সেখানে বিলোনিয়ার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পরে শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিলোনিয়া চেকপোস্ট এলাকায় তার মরদেহ হস্তান্তর করেন বিএসএফ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা মিল্লাত ও আফছারকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিল্লাতের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ আফছার বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।