করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ আবিষ্কারের পরপরই নড়েচড়ে বসেছে সারাবিশ্ব। ওমিক্রন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরও নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে।
এরই অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের আগমনী ও বহির্গমন টার্মিনালে যাত্রীর সঙ্গে একজনের বেশি দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিমানবন্দরের সীমানায় প্রবেশের পর থেকেই প্রথম চেকপোস্টে এপিবিএনের সদস্যরা তল্লাশির সময় একজন বাদে যাত্রীদের অন্যান্য স্বজনদের নামিয়ে দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানবন্দরের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
তবে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এয়ারপোর্ট এপিবিএনের একজন সদস্য জানান, রোববার (২৮ নভেম্বর) বিকেল থেকে বিমানবন্দরে ভিড় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে যাত্রীর সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমাদের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদেশগামী ও বিদেশফেরত যাত্রীদের ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে রোববার যাত্রীদের সঙ্গে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরের বাইরে এবং পার্কিং থেকে দূরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। প্রবাসী শ্রমিকরা অনেকেই ৪-৫টি ব্যাগেজ নিয়ে দেশে ফিরে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
রোববার ওমিক্রন প্রতিরোধে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের সঙ্গেও সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছি। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমদের যেসব নির্দেশনা দেওয়া হবে সেগুলো বাস্তবায়ন করব। আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা প্রত্যেককে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হবে। যাত্রীদের প্রতি আমার অনুরোধ তারা যেন অন্তত নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও সতর্ক হন। এছাড়াও বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে তাদের সরকারের নির্দেশনাগুলো মেনে চলার অনুরোধ করছি।’
গত ২৩ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন এ ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়। একদিন পর এই ধরনকে ওমিক্রন নাম দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনার এই নতুন সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সুইজারল্যান্ডে সরকারি সফরে যাত্রা করেও মাঝপথ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
নতুন এই ধরন যাতে দেশে না ছড়ায় এজন্য চার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। পরামর্শগুলো হচ্ছে-
১. বাংলাদেশেও আফ্রিকার দেশ এবং যেসব দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেসব দেশ থেকে যাত্রী আগমন বন্ধ করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
২. কোনাে ব্যক্তির এসব দেশে ভ্রমণের সাম্প্রতিক (বিগত ১৪ দিনে) ইতিহাস থাকলে তাদের বাংলাদেশে ১৪ দিন ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর টেস্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশন করতে হবে।
৩. প্রতিটি পোর্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং, সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করা (স্কুল-কলেজসহ), চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং বিভিন্ন (রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়) সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করা হলো।
৪. কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় জনগণকে উৎসাহিত করার জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষা করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
বিএসডি/এসএসএ