নিজস্ব প্রতিবেদক:
যে নদীর অপরূপ দৃশ্য নিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন- ও নদীরে, একটি কথা সুধাই শুধু তোমারে। বল কোথায় তোমার দেশ? তোমায় নেই কি চলার শেষ? দেশের সেই নদীগুলোর ওপর অত্যাচারের দূষণচিত্র সত্যি আজ ভয়াবহভাবেই প্রতিভাত হচ্ছে।
আজ ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার নদী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘Day of Action for Rivers’.
দখল হয়ে যাচ্ছে দেশের নদনদী। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার দেশের ৬৪ জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার বলে হিসাব দিয়েছিলেন। কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯ এর প্রতিবেদনে নদী দখলদারদের সংখ্যা ৫৭ হাজার বলে উল্লেখ করা হলে সাংবাদিকরা প্রশ্নে মুজিবুর হাওলাদার এ তথ্য জানান।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি নদী দখলদার খুলনা বিভাগে। সেখানে সংখ্যাটি ১১ হাজার ২৪৫ জন। নদী দখলদারের সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৪৪ জন। এসব দখলদারদের কজনকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ এক সভায় বর্তমান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর বলেন- প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে কমিশন ৬০ হাজার দখলদারের তালিকা করেছে।
নদী দূষণ ঠেকাতে না পারলে ‘ভয়াবহ’ পরিণতি হবে উল্লেখ করে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “ঢাকার চারপাশের নদীর দূষণটা মারাত্মক। এটা মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, রেকর্ড সৃষ্টিকারী। ঢাকা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরী। ঢাকায় সুস্থ শরীরে বেঁচেবর্তে থাকা মনে হয় আল্লা তায়ালার একটা কুদরত। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকার প্রতি ঘরে ঘরে একটা ভয়ঙ্কর রোগ এসে ঢুকবে, এর কোনো চিকিৎসা থাকবে না।
এই সভায় নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান আনোয়ার সাদাত বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে দেশে নদী আছে ২৩০টি, উইকিপিডিয়ায় বলা হয় ৪০৫টি, শিশু একাডেমির বিশ্বকোষে নদীর সংখ্যা বলা আছে ৭০০টি, আমরা বলছি দেড় হাজারের ওপর, আবার কেউ বলেন দুই হাজারের ওপর। নদীর আসলে সংখ্যা কতো? সেটা জাতির সামনে আনতে হবে।
আনোয়ার সাদাত বলেন, অভিন্ন নদী কতোগুলো তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। সরকারিভাবে বলা হয়, অভিন্ন নদী ৫৭টি। এর মধ্যে তিনটি মিয়ানমারের সঙ্গে, বাকি ৫৪টি ভারতের সঙ্গে। কিন্তু আমরা হিসেব করে ১০৭টি অভিন্ন নদী পাচ্ছি। এই সংখ্যাগুলো প্রকৃতভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
এক তথ্যে জানা যায়, বর্তমান সরকার দেশের নদ-নদীগুলো ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ১৭৮টি নদী খনন ও পুনরুদ্ধার করে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ চলাচলের উপযোগী করার কাজ শুরু করেছে। এই প্রকল্প ২০২০-২০২১ সালে শুরু হয়ে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। নদী খনন এর পাশাপাশি নদীখেকো ও দখলদাররা যাতে আবার নতুন করে দখল করতে না পারে সে লক্ষ্যে তদারকী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও সারাদেশে নদী দূষণমুক্ত রাখার জন্য অদ্যবধি তেমন কোন ভূমিকা নেওয়া হয়নি। নদী দূষণমুক্ত রাখা না গেলে হাজার, হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নদী সচল রাখার সমস্ত উদ্যোগ ব্যহত হতে পারে।
বিএসডি/আইপি