অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ। আর মাত্র দিন দুয়েক পরই প্রতিবেশী দেশ ভারতের মাটিতে পর্দা উঠছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের। যেখানে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে ক্রিকেট বিশ্ব মাতাবেন বিশ্বসেরা সব ক্রিকেটাররা। বিরাট কোহলি, বাবর আজম, মিচেল স্টার্ক, বেন স্টোকস কিংবা সাকিব আল হাসানদের মতো তারকারা ছাড়াও পুরোনোদের ভিড়ে আগমনী বার্তা দেবেন নতুন দিনের তারকারাও। বার্তা সংস্থা এএফপির চোখ নতুন প্রজন্মের পাঁচ ক্রিকেটারের দিকে। যারা ভারতে নজর কেড়ে হয়ে উঠবেন আগামীর তারকা। এ তালিকায় আছেন বাংলাদেশি তরুণ ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়।
তাওহীদ হৃদয় (বাংলাদেশ) :
২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন হৃদয়। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মিডল অর্ডার এ ব্যাটার বড় কিছু করার সক্ষমতা রাখেন। এমনকী বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাফল্যের পর গেল মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অভিষেক হয় ২২ বছর বয়সী হৃদয়ের। এরপরই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। একদিনের ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১৭টি ওয়ানডে খেলে ৫টি হাফ-সেঞ্চুরিতে নিজের জাত চিনিয়েছেন হৃদয়। তার মেন্টর মুশফিকুর রহিমের উপহার দেওয়া ব্যাট দিয়ে ভারত মাতানোর অপেক্ষায় হৃদয়।
ব্যাটার হৃদয়ের প্রশংসা বাংলাদেশের সহকারী কোচ নিক পোথাসের কণ্ঠে,‘দক্ষতার দিক দিয়ে সেরাটা স্পর্শ করার প্রবল ইচ্ছা তার মধ্যে সব সময় বিরাজমান। এ ছাড়া তার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা এবং শেখার প্রবল ইচ্ছা আছে। তার সক্ষমতায় আমি রোমাঞ্চিত।’
নুর আহমাদ (আফগানিস্তান) :
বলের ওপর দারুণ নিয়ন্ত্রন, গতি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ে নতুনত্ব এনে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নজর কেড়েছেন বাঁ-হাতি রিস্ট স্পিনার নুর। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আফগানিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল নুরের। মাত্র ১৭ বছর বয়সে গেল বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের সক্ষমতার প্রমান দিয়েছেন ১৮ বছর বয়সী নুর। সতীর্থ রশিদ খানকে আদর্শ মানা নুর গেল বছর আইপিএলে গুজরাট লায়ন্সের হয়ে নজর কাড়েন। আইপিএলের পাশাপাশি সারা বিশ্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নুরের চাহিদা ব্যাপক। বিশ্বকাপে রশিদের যোগ্য ব্যাক-আপ হতে পারেন তিনি।
মাথিশা পাথিরানা (শ্রীলঙ্কা) :
২০১৯ বিশ্বকাপ শেষে লাসিথ মালিঙ্গার অবসরের পর থেকে শ্রীলঙ্কা এমন একজন বোলারের সন্ধান করছে যে কি না প্রতিপক্ষের উইকেট শিকারে পারদর্শিতা দেখাবেন এবং ব্যাটারদের একপ্রান্তে আটকে রাখবেন। মালিঙ্গার জায়গায় সম্ভাব্য বোলার হিসেবে পাথিরানাকে খুঁজে পেয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। মালিঙ্গার মতই স্লিঙ্গিং, ডেলিভারির সময় নিচ থেকে হাত নিয়ে আসা ও ভয়ঙ্কর ইয়র্কারে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি।
গত বছর আইপিএলে অ্যাডাম মিলানের বদলি হিসেবে পাথিরানাকে দলে নেন চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। খেলার সুযোগ পেয়েই অভিষেকের প্রথম বলেই শুভমান গিলের উইকেট তুলে নেন পাথিরানা। গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে হলে ‘বেবি মালিঙ্গা’র পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
গাস অ্যাটকিনসন (ইংল্যান্ড) :
২০১৯ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ে বড় কৌশল ছিল গতিময় বোলিং। ঐ দলে জোফরা আর্চার এবং মার্ক উডের মত গতিময় বোলার ছিল। যারা ধারাবাহিকভাবে ঘন্টায় ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করেছেন। আসন্ন বিশ্বকাপ দলে উড থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদী কনুইয়ের ইনজুরি থেকে সুস্থ হতে লড়াই করছেন আর্চার। বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে রিজার্ভ হিসেবে থাকছেন আর্চার। তবে দলে আছেন গতি দিয়ে ঝড় তোলার আরেক পেসার অ্যাটকিনসন। চলতি বছরের শুরুর দিকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথমবারের মত ডাক পান ২৫ বছর বয়সী এই পেসার। ৩ ম্যাচে মাত্র ১টি উইকেট নিলেও ঘন্টায় ৯৫ মাইল গতিতে বোলিং করেছেন অ্যাটকিনসন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডাচ ব্যাটার। গত বছরের মে মাসে অভিষেক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরি করেন তিনি। এ বছরের জুনে জিম্বাবুয়ের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৬ বলে ১১১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিশ্বকে চমক দেখান তিনি।
নিদামানুরুর ইনিংস সুবাধে ঐ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৩৭৪ রান স্পর্শ করে ম্যাচটি টাই করে সুপার ওভারে জয় পায় নেদারল্যান্ডস। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাছাইপর্বে সেরা দুই দলের একটি হয়ে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পায় নেদারল্যান্ডস।
বিএসডি / এলএম