খেলার মাত্র আট মিনিট। তখনই ২-০ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। খেলার শুরুটা না দেখে থাকলে ততক্ষণে অনেকেই হয়তো চোখ কচলানো শুরু করেছেন, প্রতিপক্ষ দুর্বল কোনো দল না তো!
না, দুর্বল কোনো দলের বিপক্ষে আজ নামেনি আর্জেন্টিনা। নেমেছিল কুয়াদ্রাদো-ওসপিনা-জাপাতাদের কলম্বিয়ার বিপক্ষে। তাতেই প্রথমার্ধের আট মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিলেন মেসিরা। তিন মিনিটে উদিনেসের মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পলের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন সেন্টারব্যাক ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। আতালান্তার এই সেন্টারব্যাকের অভিষেক হয়েছে গত ম্যাচে, চিলির বিপক্ষে। রক্ষণভাগে দুর্দান্ত খেলে সেদিন নজর কেড়েছিলেন, আজ নজর কেড়েছেন গোল করে। দুই ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, আর্জেন্টিনার মূল একাদশের অংশ হতে এসেছেন। হারিয়ে যেতে নয়।
পাঁচ মিনিট পর পারেদেসের ঝলক। পিএসজির এই মিডফিল্ডার প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে ঢুকে কয়েকজনকে কাটিয়ে দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে বাঁ পা দিয়ে যেভাবে গোল করলেন, অনেকের মনে হতে পারে, গোলটা বুঝি মেসিই করেছেন!
রোমেরো আর পারেদেসের কল্যাণে এই দুর্দান্ত শুরুর পরেও ম্যাচ জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ড্র করেছে আবারও। কলম্বিয়ার হয়ে দুই গোল করে এক পয়েন্ট উদ্ধার করেন রোমেরোর আতালান্তা-সতীর্থ লুইস মুরিয়েল ও পালমেইরাসের স্ট্রাইকার মিগেল বোর্হা। আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডারদের দুটি ভুলই মূলত দলটাকে ২ পয়েন্ট বঞ্চিত করে। এতে কোপা আমেরিকার আগে কোচ লিওনেল স্কালোনির কপালে বেড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরেও আর্জেন্টিনা আক্রমণে গিয়েছে। লাওতারো মার্তিনেজ, জিওভানি লো চেলসো আর নিকোলাস গঞ্জালেসের দুর্দান্ত এক প্রতি আক্রমণে গোল হয়েই যাচ্ছিল। স্টুটগার্টের উইঙ্গার গঞ্জালেস বল বাইরে মারায় গোলটা হয়নি। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে লিওনেল মেসির ফ্রি-কিক আটকে দেন নাপোলির গোলকিপার ওসপিনা।
তবে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার চিন্তা বাড়িয়েছে গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের চোট। বহু বছর ধরে আর্জেন্টিনার গোলপোস্টের নিচে তেমন নির্ভরযোগ্য কেউ নেই। ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার হয়ে মার্তিনেজের ফর্ম আশা দিয়েছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। রোমেরোর মতো গত ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল তাঁরও। কিন্তু এই ম্যাচে একটা ক্রস সামলাতে গিয়ে কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনার সঙ্গে সংঘর্ষে মাঠে পড়ে যান তিনি। পাঁচ মিনিট সেবা-শুশ্রূষা নিয়েও যখন ঠিক হলেন না, তখন আর্জেন্টিনার সমর্থকদের বুকে ভয় বাড়িয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন তিনি। মাঠে নামানো হয় পোর্তোর অগুস্তিন মার্চেসিনকে।
প্রথমার্ধে যতটা ভালো খেলেছে, দ্বিতীয়ার্ধে ঠিক ততটাই বিরক্তিকর খেলেছে আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়ার আক্রমণ থামাতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেছেন রোমেরো। টানা দুই ম্যাচে দুবার হলুদ কার্ড দেখায় আগামী সেপ্টেম্বরে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে নামতে পারবেন না তিনি।
৪৯ মিনিটে নিকোলাস ওতামেন্দির একটা ভুলে পেনাল্টি পেয়ে বসে কলম্বিয়া। হলুদ কার্ড দেখেন ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক এই ডিফেন্ডার। পেনাল্টিতে ব্যবধান কমান মুরিয়েল।
ম্যাচের একদম শেষে ভিয়ারিয়ালের ডিফেন্ডার হুয়ান ফয়থ নিজেদের অর্ধে ড্রিবল করতে গিয়ে বল হারিয়ে বসেন। সেখান থেকে জুভেন্টাসের উইংব্যাক হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ক্রসে মাথা ঠেকিয়ে গোল করেন বোর্হা। যদিও আরেকটু চেষ্টা করলে শটটা আটকাতে পারতেন মার্চেসিন। তাঁর হাতের ফাঁক গলে শেষ মূহুর্তে গোলটা খেয়ে দুই পয়েন্ট হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
কোপা শুরুর আগে রক্ষণভাগের এই অবস্থা স্কালোনিকে চিন্তাতেই ফেলবে।