ক্রীড়া ডেস্ক,
নিউজিল্যান্ড সিরিজে উইকেট কিপিং করবেন কে? অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম নাকি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নুরুল হাসান সোহান? সমাধান দিয়েছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। বাংলাদেশের প্রধান কোচের ‘ভাগাভাগি’ সমাধানটা মোটেও পছন্দ হয়নি মাশরাফি বিন মুর্ত্তজার। সমালোচনা করেন ডমিঙ্গোর এমন সিদ্ধান্তের। এরপর উইকেট কিপিংকেই বিদায় জানালেন মুশফিক। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপরই চটেছেন মাশরাফি। প্রশ্ন তুললেন কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিদেশি কোচদের প্রাধান্য দেয়ার সংস্কৃতিটা বেশ পুরনো। এখন পর্যন্ত টাইগারদের দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ হয়নি কোনো দেশি কোচের। অল্প ক’জন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কিছুদিনের জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিদেশি কোচদের নিয়ে কোনো আপত্তি নেই মাশরাফির।
তবে তাদের বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি এবং ক্রিকেটারদের নিয়ে বুঝতে পারার সক্ষমতা থাকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফির দাবি, নিয়োগের সময় বিসিবির লক্ষ্য থাকে কোচের প্রফাইল কতোটা সমৃদ্ধ। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশের কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে লম্বা একটি পোস্ট করেছেন মাশরাফি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘কোচ নিয়োগের সময় যে ইন্টারভিউ নেয়া হয়, সেখানে আসলে তাকে কী প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌ কি কোনো প্রশ্ন করা হয়? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয়, ‘তোমার কিক করার ইচ্ছা’ হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে। ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করা হয়, ‘দারুণ কোচ, কী সুন্দর পরিকল্পনা, এর মতো কোচই হয় না।’
‘আমার তো মনে হয়, ভুল ওখানেই হয়ে যায়। কারণ মানুষকে বোঝাতে আমরা সব সময় হাই প্রোফাইল কোচ খুঁজি, যা পরে আর কোনো কাজে আসে না।’
কোচ নিয়োগের সময় কোন জায়গাটায় জোর দেয়া উচিত, তা নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন, আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিমাম খেলোয়াড়কে নিয়ে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে (এরকম কোচ)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা নিয়ে আসা। তা না হলে তো সে বুঝব্ইে না, একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কত দিন লেগেছে, বা অতীতে তাদের অবদান কী, একজন মোস্তাফিজ কীভাবে উঠে এসেছে।’
মাশরাফির মতে, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ধরন সম্পর্কে কোচদের ধারণা থাকে না বলেই ক্রিকেটারদের অপমানের শিকার হতে হয়। মাশরাফি বলেন, ‘বারবার বলেছি, আবারও বলছি, দলের আগে কখনোই কোন খেলোয়াড় হতে পারে না। ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে। অফ ফর্ম সব খেলোয়াড়ের জীবনেই যায়। বাদও পড়ে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট থেকে অপমানিত শুধু আমাদের দেশেই বেশি হয়।’
‘পারফর্ম না করলে বাদ দেবেন স্বাভাবিক। আবার তাকে তো সহযোগিতা করতে হবে, কীভাবে ফর্মে আনা যায় বা তাকে মেন্টালি কীভাবে সাপোর্ট করা যায়। কোনোভাবেই আপনি বুঝতে দিতে পারেন না যে, আপনি তাকে আর আপনার সময়কালে দেখতে চান না। এটার কারণ একটাই, কোনো কোচই আমাদের দেশে কাজ করার আগে আমাদের দেশের ক্রিকেটের ফলোয়ার থাকে না। চাকরির জন্য আসে, শেষ হলে চলে যায়।’
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কোচদের নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রায় ৯/১০ জন কোচের সঙ্গে কাজ করেছি আমি। প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারণ একেকজনের কাজের ধরন একেকরকম। কিন্তু সব সময় দেখেছি, প্রত্যেক কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুইজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়। পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্য কেউ তাকে আর কিছুই বুঝাতে পারে না। বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে।
বিএসডি/এএ