নিজস্ব প্রতিবেদক,
নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভয়াবহ থাবা এবং সরকারের কঠোর লকডাউনে ভয়ংকর আর্থিক ক্ষতির মুখে দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। একশ্রেণির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লকডাউনের শর্তের আওতায় পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে ঘরবন্দি জীবনযাপন করছেন। এ শ্রেণির মানুষের হাতে টাকাÐপয়সা ভেঙে খেতে খেতে তাদের ব্যবসার পুঁজি দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। শেষ হচ্ছে। অন্যদিকে, নিত্য জরুরি পণ্য বিক্রীত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লকডাউনে ব্যবসা খুলে বসার সুযোগ পেলেও তারাও ভালো নেই। লকডাউনে দোকান খোলার সময় সীমিত করার ফলে এ পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই হারাচ্ছেন পুঁজি। বিশেষ করে পচনশীল পণ্য বিক্রেতা
সবজি ব্যবসায়ীরা। এক দিনের পণ্য দুই দিনেও বিক্রি করতে পারছেন না তারা। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের। তবে শহরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিকাল ৫টা পর্যন্ত ব্যবসা খোলা রাখার সুযোগ পেলেও জেলা শহরে বেলা ১১টার পর সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ক্ষুদ্র থেকে সবপর্যায়ের
ব্যবসায়ীরা রয়েছেন আর্থিক ক্ষতির মুখে।
দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের অবস্থান ও মানুষের জীবন জীবিকা বিবেচনায় কঠোর লকডাউন মেনে চলার সক্ষমতা সব শ্রেণি পেশার মানুষের নেই। তাই লকডাউনের কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা এখন সরকারের জন্য উত্তমপন্থা হবে। এতে অর্থনীতির গতি সচল থাকবে। মানুষ করোনায় মরবে
আবার লকডাউনের কারণে উপার্জন বন্ধ হয়ে না খেয়ে মরবে; দুটি একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই সরকারের উচিত বিকল্প পথে অন্য উপায় বের করা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউনের বিকল্প কী হতে পারে করোনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে, এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি কঠোর লকডাউনের স্থিতিকাল ১৪ দিন। সেটিও শেষ হবে শিগগিরই। এই কঠোর লকডাউনও মানুষ মানছে না। তবু সান্ত¡নার এই লকডাউন করোনা নিয়ন্ত্রণে আসাতে একটা ভূমিকা রাখবে, সেটা ইতিবাচক। এর আগেও সরকার এর সুফল পেয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষের কথা বিবেচনা
করে লকডাউনের বিকল্প হিসেবে মানুষকে শতভাগ মাস্ক পরায় অভ্যস্ত করতে হবে এবং যতদূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসাসহ দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করতে হবে। এটা করতে পারলে সরকারের দুক‚ল রক্ষা পাবে; ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে না খেয়ে মরবে না এবং করোনা ছড়িয়ে পড়বে না।
মিরপুরের কালশী বাজারের ক্ষুদ্র সবজি (ফুটপাত) ব্যবসায়ী নুরুল হক বলেন, এলাকা বিবেচনায় সবজি বিক্রি হয়। কালশী গামেন্টস এলাকা অধ্যুষিত সন্ধ্যার পর থেকে? রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়। কিন্তু লকডাউনে পাঁচটার আগে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। এর ফলে বৃহস্পতিবারের পণ্য শুক্রবার অর্থাৎ দুই দিন ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে এখন। এর ফলে মূল পুঁজি থেকে এক দিনের কেনা পণ্য দুই দিনে বিক্রি করায় সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। বাউনিয়া বাঁধের সবজি ব্যবসায়ী তাওহিদ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে একজন মানুষ যে পরিমাণ সবজি বাজার করত করোনা শুরুর পর এখন অর্ধেক টাকার বাজার নেই। সবাই বলে টাকা নেই।
এই বিক্রেতা আরো বলেন, সবাইর একটাই কথা বেঁচে থাকার জন্য কিনছি। আরো বলেন, এ কারণে আমরাও ভালো নেই। ক্রেতা কম পেলে আড়তদাররা কম পণ্য বিক্রি করেন না; কিনতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ। যার ফলে অবিক্রীত পণ্য থেকেই প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর ফলে সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেনারসি পল্লীর ফুটপাতে কাপড় ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কাপড় বিক্রি না হওয়াই লকডাউনেও আমরা দোকান বসাতে পারছি না। আমাদের পেটে পুরো লাথি মারা হয়েছে। জমা পুঁজি ভেঙে খেতে খেতে জীবন এখন ত্রাহি অবস্থার মধ্যে। ঈদের আগে দোকান বসাতে না পারলে না
খেয়ে মরতে হবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ প্রতিদিনের বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কঠোর লকডাউন মেনে চলার করার আর্থিক সামর্থ্য নেই। যতই কঠোর লকডাউন দেওয়া হোক, মানুষ সেটা মানবে না; মানছে না। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ত্রাহি অবস্থা। কারণ ব্যবসা করতে না পেরে তাদের ব্যবসায় খাটানো টাকা বা পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্রত।সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুঁজি হারাচ্ছেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু তাদের অবস্থা কেন বলছেন সবাইর অবস্থা একই। লকডাউনের বিকল্প পথ খুঁজে বের করা উচিত সরকারের বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. বেনজীর আহমেদ প্রতিদিনের বলেন, ‘লকডাউনের বিকল্প লকডাউন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবস্তরকে মাঠে নামিয়েও সরকার মানুষকে ঘরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের লকডাউনের অর্থ হচ্ছে সংক্রমণ
কিছুটা হলেও কমবে। তবে মানুষের জীবনÐজীবিকার কথা ভাবলে লকডাউন শিথিল করে মানুষের কর্মের সুযোগ দিয়ে মাস্ক পরাই শতভাগ নিশ্চিত করতে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখতে পেলে তাৎক্ষণিক শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। টিকা যেমন বিনামূল্যে
দিচ্ছে, একইভাবে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করার সুযোগ দিলে সরকারের সবক‚লই রক্ষা পেতে পারে।’ সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিকাল ৫টা পর্যন্ত থাকলেও করোনার বিস্তার যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, জেলা শহর বা গ্রামগঞ্জে সেজন্য আমরা স্থানীয়ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে বেলা ১১টা নির্ধারণ করে দিয়েছি। যদি এ সময়ের মধ্যে মানুষের দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে অসুবিধা দেখা দেয় এবং এমনটা আমরা মনে করি, তাহলে সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবির।
বিএসডি/এমএম/এসআই