নিজস্ব প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ দুজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা এরশাদুল হকসহ তার এক সহকর্মী পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছেন। মহেশ রোডের কুড়িঘর গ্রামের আহুববাড়ির সামনে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।
নিহতরা হলেন-নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান পশু চিকিৎসক আবুল কাশেমের ছেলে মো. এরশাদুল হক (৩৫)। তিনি নাটঘর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী। অপরজন বাদল সরকার (২৩)। তিনি নান্দুরা গ্রামের সন্তোষ সরকারের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ভাড়া করা কিলাররা সিনেমা স্টাইলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যায় অংশ নেয় অন্তত ১৬/২০ জন। ৬/৭টি মোটরসাইকেল নিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় তারা। প্রতিটি মোটরসাইকেলে তিনজন করে খুনি বসা ছিল। এছাড়া সড়কের ধারে অবস্থান করে আরও অন্তত ৫/৬ জন।
স্থানীয়রা আরও জানান, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড। পুলিশ কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের কথা। তবে পুলিশের ধারণা, পূর্ব বিরোধের জের ধরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, রাতেই প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বার্ধক্যজনিত কারণে প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবুল কাশেমের স্থলে তার বড় ছেলে মো. এরশাদুল হক এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি নিয়মিত জনসংযোগ চালান। শুক্রবার রাতে ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামের বাজার এলাকায় ইসলামী জলসা চলছিল। সেখানে এরশাদুল ও বাদলসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল দিয়ে যান। জলসায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে উপস্থিত সকলের কাছে দোয়া চান।
তবে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। চালকের আসনে থাকা বাদল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর এরশাদুল কানে ও গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে এরশাদুল মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মাত্র কয়েক সেকেন্ড চলে গুলির তাণ্ডব। পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী জড়ো হওয়ার আগেই খুনিরা মোটরসাইকেলে করে উল্লাস করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ওই ইউনিয়নের নান্দুরা গ্রামের আবু নাসেরের গোষ্ঠীর চারটি ও সফরের গোষ্ঠীর পাঁচটি ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া খায়ের মিয়ার তিনটি গরু লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নিহত এরশাদুলের ভাই কাতার প্রবাসী আকতারুজ্জামান জানান, মোটরসাইকেলে করে একদল সন্ত্রাসী এসে আমার ভাইকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় পৌঁছানোর পর পরই প্রতিপক্ষের নারী-পুরুষ সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় কুড়িঘর গ্রামে চরম আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। ছেলের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, আমি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
নবীনগর থানার ওসি আমিনুর রশীদ জানান, ভোরে সাড়ে ৫টায় সোহাগ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতার সোহাগের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। দুপরে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান ও পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রসঙ্গত, দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত এরশাদুল হকের চাচাতো ভাই মো. সাইফুল্লাহকেও প্রায় আড়াই বছর আগে হত্যা করা হয়। ওই হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী ছিলেন এরশাদুল। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে এরশাদুলের চাচাতো ভাই সাইফউল্লাহকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় এরশাদুল বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল ২০ জনকে আসামি করে নবীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। পলাতক আসামিদের কয়েকজন সম্প্রতি বাড়ি এলে তাদের আটক করে পুলিশ। পূর্বের এই বিরোধের জেরে গত রাতের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।
বিএসডি/জেজে