খেলাধূলা প্রতিনিধি:
নেতৃত্বগুণ থাকার পরও পাকাপাকিভাবে অস্ট্রেলিয়া দলের দায়িত্ব না পাওয়ায় ওয়াহর ভূমিকা দেখেছেন ওয়ার্ন। অবসর–পরবর্তী সময়ে বেশ অনেকবারই ওয়াহকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন ওয়ার্ন। জবাবে স্টিভ ওয়াহ সরাসরি জবাব না দিলেও দুজনের মধ্যে শীতল সম্পর্ক টের পেয়েছেন সবাই।
ওয়াহ ভাইদের ছোটজনকে আজীবন ডেকে গিয়েছেন ‘জুনিয়র’ বলে। সেই মার্ক ওয়াহও ওয়ার্নের মৃত্যুর খবর সহ্য করতে পারছেন না, ‘আমাদের ক্রিকেট পরিবারের আরেকজনকে হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারছি না। মাঠ ও মাঠের বাইরে ও সত্যিকারের বিনোদন দেওয়ার মতো এক চরিত্র ছিল। ওর সঙ্গে কাটানো একটা মুহূর্তও একঘেয়ে ছিল না। জীবনকে পুরোদমে উপভোগ করে গেছে সে। ওর আপনজনদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। শান্তিতে থেকো বন্ধু!’
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের প্রধান দুই অস্ত্র ছিলেন ওয়ার্ন আর গ্লেন ম্যাকগ্রা। এই জুটি সিম বোলিং আর স্পিনের যে রসায়ন বিশ্বকে দেখিয়ে গিয়েছে, আর কোনো জুটি দেখাতে পেরেছে কি না সন্দেহ।
ওয়ার্নের সেই বিখ্যাত আক্রমণসঙ্গীর হৃদয়ও ভেঙে যাচ্ছে কষ্টে, ‘একদম ভেঙে পড়েছি আজ। জীবনের গণ্ডি ছাড়ানো এক চরিত্র ছিল ওয়ার্নি। আমি ভেবেছিলাম, ওর কখনো কিছু হবে না। মানুষ বিশ জনমেও যা করতে পারে না, ও এক জন্মেই এর চেয়ে ঢের বেশি করে গিয়েছে। সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মানসিকতার এক খেলোয়াড় ছিল সে। হাত থেকে বের হয়ে যাওয়া ম্যাচগুলোর ভাগ্য ঘুরিয়ে জিতিয়ে দিয়েছে আমাদের, অনেক অনেকবার। ও জীবনটাকেও একইভাবে উপভোগ করে গেছে। ওর সঙ্গে কাটানো কোনো মুহূর্তই বিরক্তিকর ছিল না। অসাধারণ এক বন্ধু, প্রেমময় এক বাবা ছিল সে। বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসত। ব্রুক, জ্যাকসন, সামার (তিন ছেলেমেয়ে), কিথ (বাবা), ব্রিজিত (মা) আর জেসনের (ভাই) প্রতি সহমর্মিতা জানাই। শান্তিতে থেকো প্রিয় বন্ধু। তোমার মতো আর কেউ কখনো আসবে না!’
ওয়ার্নের হাজার হাজার বলে উইকেট রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তাঁর শোকবার্তায় সে কথাই উঠে এসেছে, ‘স্তব্ধ আমি। আমার ক্যারিয়ারের হাইলাইটসই হলো ওয়ার্নের বলে উইকেট রক্ষা করতে পারা। উইকেটের পেছনে বিশ্বের সেরা জায়গায় বসে থেকে মায়েস্ত্রোকে দেখতাম একের পর এক জাদু বের করতে। কখনো কখনো এ জন্য স্বার্থপরও মনে হতো নিজেকে, কারণ হিলস (ইয়ান হিলি) আর আমারই এই সৌভাগ্য হয়েছিল। শান্তিতে থেকো ওয়ার্নি!’
অস্ট্রেলিয়ার আরেক সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংও শোকস্তব্ধ। তাঁর বিখ্যাত ‘পান্টার’ ডাকনামটা যে ওয়ার্নেরই দেওয়া, ‘ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমার বয়স যখন মাত্র ১৫, তখন একাডেমিতে ওয়ার্নের সঙ্গে দেখা। ও-ই আমার ডাকনাম রেখেছিল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা সতীর্থ ছিলাম। জীবনের নানান উত্থান–পতনের সঙ্গী ছিল সে। ও ছিল এমন একজন, যাকে ভরসা করা যেত। পরিবারকে অনেক ভালোবাসত ও। এমন একজন ছিল, যাকে আপনি সব প্রয়োজনে সব সময় পাবেন। বন্ধুদের সব সময় প্রাধান্য দিত ও। আমার সঙ্গে বা বিপক্ষে খেলা শ্রেষ্ঠ বোলার সে। শান্তিতে থেকো রাজা।’
স্পিনের রাজাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আরেক সতীর্থ ম্যাথু হেইডেনও, ‘শান্তিতে থেকো ওয়ার্নি। ঈশ্বর তোমার মতো একজনই বানিয়েছিলেন। স্পিনের রাজা।’ ড্যামিয়েন ফ্লেমিংয়ের কাছে ওয়ার্নি ছিলেন হলিউড থেকে উঠে আসা কোনো চরিত্র, ‘অনেক কম বয়সে…শেন ওয়ার্নের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছি। এমন ক্রিকেটার জীবনে একবারই আসে। এমন একজন স্পিনার, যার মানসিকতা ছিল পেস বোলারের। হলিউডি ঢঙে জীবন যাপন করত। ওয়ার্ন পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’
তবে ওয়ার্নের পুরো ছবি যেন ফুটে উঠেছে ব্রেট লির একটা টুইটেই, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না। ক্রিকেট–ইতিহাসের সেরা বোলার। ক্রিকেটের রকস্টার। অনেক আগেই চলে গেল। শান্তিতে থেকো বন্ধু!’
বিএসডি/ এফএস