জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এককভাবে (স্ট্যান্ড অ্যালোন ১৩৮ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক, যা আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ বেশি। তবে সাবসিডিয়ারিসহ সামষ্টিকভাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১২৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম।
গত ৮ নভেম্বর ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে এক অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল ঘোষণা করা হয় বলে শুক্রবার জানিয়েছে ব্যাংকটি। স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বিশ্লেষক, পোর্টফোলিও ম্যানেজার ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর এফ হোসেন, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) অ্যান্ড সিএফও এম. মাসুদ রানা, ডিএমডি অ্যান্ড সিওও মো. সাব্বির হোসেন, ডিএমডি অ্যান্ড হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং তারেক রেফাত উল্লাহ খান, ডিএমডি অ্যান্ড হেড অব এসএমই ব্যাংকিং সৈয়দ আব্দুল মোমেন, হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. মাহীয়ুল ইসলাম এবং হেড অব ট্রেজারি অ্যান্ড এফআই মো. শাহীন ইকবাল ও হেড অব ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট আহমেদ রশীদ জয় বিভিন্ন সেগমেন্টের ফল তুলে ধরেন।
তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে স্ট্যান্ড অ্যালোন ভিত্তিতে শূন্য দশমিক ৯৯ টাকা ও কনসোলিডেটেড ভিত্তিতে ১ দশমিক ০২ টাকা।
কৌশলগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে লোন ও অ্যাডভান্স ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় রিটেইল ব্যবসা অর্জনে অগ্রগামী ছিল। করপোরেট ও কমার্শিয়াল বিজনেস কিছু কৌশলগত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে লোন প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
ব্যাংকটি জানায়, ফান্ডিং বেস যথার্থভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্তে ডিসেম্বর, ২০২০ এর তুলনায় আমানত ৪ শতাংশ কমেছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সেভিং অ্যাকাউন্ট (কাসা) মিক্স তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৫৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫৩ শতাংশ।
নন-ফান্ডেড বিজনেস লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। একসেপটেন্স ৫০ শতাংশ, এলসি ইস্যুয়েন্স ৭০ শতাংশ ও বিল কালেকশন ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
২০২০ সালের এপ্রিলে থেকে ঋণের ইন্টারেস্ট হার ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার ও পরবর্তীতে আমানতের ওপর ইন্টারেস্ট সীমা নির্ধারণ করার পর থেকে পুরো ব্যাংকিং খাতের ইন্টারেস্ট মার্জিন কমে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক নেট ইন্টারেস্ট আয়ে ৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমানতের খরচ কার্যকরভাবে ব্যবস্থাপনার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
এ প্রান্তিকে আয়-ব্যয়ের অনুপাত উন্নীত হয়ে স্ট্যান্ড অ্যালোনে ৫২ শতাংশ এবং কনসোলিডেটেড ভিত্তিতে ৬৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রিটার্ন অন ইকুইটি (আরওই) ও রিটার্ন অব অ্যাসেট (আরওএ) আরও উন্নীত হয়েছে। স্ট্যান্ড অ্যালোন ভিত্তিতে রিটার্ন অন ইকুইটি ১২ শতাংশ ও রিটার্ন অব অ্যাসেট ১ দশমিক ৪ শতাংশ, কনসোলিডেটেড ভিত্তিতে রিটার্ন অন ইকুইটি ১১ শতাংশ ও রিটার্ন অব অ্যাসেট ১ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে।
আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খেলাপি ঋণের হার (এনপিএল) শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে এনপিএল কভারেজ ১৫১ শতাংশ থেকে কমে ১৪৫ শতাংশ হয়েছে।
কনসোলিডেটেড ভিত্তিতে ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি রেসিও (সিএআর) হয়েছে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। যার মধ্যে ৯১ শতাংশ টিয়ার-১ ক্যাপিটাল, যার দেশের ব্যাংকিং খাতে অন্যতম শীর্ষস্থানীয়। স্ট্যান্ড অ্যালোন ভিত্তিতে ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি রেসিও হয়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ, যা রেগুলেটরি বাধ্যবাধকতার সীমা ১২ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে অনেকাংশে বেশি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এ কনসোলিডেটেড ভিত্তিতে শেয়ারপ্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু ৩৫ দশমিক ২ টাকা এবং স্ট্যান্ড অ্যালোন ভিত্তিতে ৩৪ দশমিক ১ টাকা হয়েছে।
আর্থিক ফল সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান আর্থিক সূচকগুলো ব্যবসা স্বাভাবিকের দিকে ফিরে যাওয়ায় ব্যবসায় গতি আসতে শুরু করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ প্রান্তিকে রিটেইল ব্যবসা অগ্রগামী ছিল, ফলে আমরা লোন ও অ্যাডভান্সে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। নন-ফান্ডেড আয়, নেট ইন্টারেস্ট আয় ও কাসা মিক্স আরও উন্নত হয়েছে, যা ব্যাংকের ব্যবসার জন্য শুভ বার্তা নিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আরওই, আরওএ ও সিএআর ব্যাংকের দৃঢ় অবস্থা ও আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দেয়, যা গ্রাহকদের আস্থা বাড়াবে। ব্যাংকিং খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিশ্বখ্যাত ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি- এসঅ্যান্ডপি গত পাঁচ বছর ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং ‘বি প্লাস’ বজায় রেখে আসছে। এর মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক পুরো ব্যাংকিং খাতে আলাদা অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছে।