নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক দিনের টানা বর্ষণে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ভবদহ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। অথচ সরকারিভাবে এ অঞ্চলকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হয়নি। কেন ডুবছে মণিরামপুরের ভবদহ অঞ্চল? পানিবন্দি মানুষের জন্য ব্যবস্থা ও জলাবদ্ধতার প্রকৃত কারণ জানতে স্বঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘মণিরামপুরের ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা; লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি’ শীর্ষক সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম আসলেই একটি বিশেষ অঞ্চল প্লাবিত হওয়া এবং লাখ লাখ মানুষের দুর্দশা সৃষ্টি হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বছরের পর বছর ধরে মানবিক বিপর্যয় সংগঠিত হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া বা সমস্যার সমাধান না করা পদ্ধতিগত মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে কমিশন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনাপূর্বক স্বঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, যশোর-খুলনা অঞ্চলের মানুষের দুঃখের একটি নাম হলো ভবদহ। বৃষ্টির মৌসুম আসলেই এই অঞ্চলের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটে। ভারী বৃষ্টি হলে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় ফসলের খেত, হাজার হাজার মাছের ঘের ও পুকুর। ক্ষতি হয় মানুষের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সরকার আসে, সরকার যায়, প্রকল্প আসে, প্রকল্প শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ভবদহ এলাকার মানুষের সমস্যার কোনো সমাধান হয় না।
গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে মণিরামপুর উপজেলার ভবদহ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এ অঞ্চলকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হয়নি। এ অঞ্চলে শতশত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা হাঁটু পানি ভেঙে কেউ বা বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজের ক্লাসে উপস্থিত হতে দেখা যায় বলে সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বছরের পর বছর একটি জনপদের জনগণের জীবনযাত্রায় বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এ প্রকারের দুর্যোগের হাত থেকে এলাকায় বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে একটি স্থায়ী ব্যবস্থার সুযোগ প্রদান তাদের মানবাধিকারের দাবি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে সমস্যার একটি কার্যকর ও বাস্তবানুগ সমাধান নিরূপণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলে কমিশন প্রত্যাশা করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনা করে।
এ অবস্থায়, এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং কেন এতদিনেও এ সমস্যার সমাধান করা যায়নি তা কমিশন জানতে চায়। সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যার একটি প্রকৃত সমাধানের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান ও পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বলা হয়েছে।